তিন চাকার রিকশা-ভ্যানজাতীয় যান ‘ভুটভুটি’ এখন দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার শহর ও মফস্সল এলাকার নিত্যচিত্র। মালপত্র পরিবহনে সস্তা ও সহজ হওয়ায় এই যান দ্রুত জনপ্রিয় হলেও, তার ভয়াবহ মূল্য দিচ্ছে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য। লাইসেন্সবিহীন ভুটভুটি থেকে নির্গত ঘন কালো ধোঁয়ায় ক্রমশ দূষিত হয়ে উঠছে জেলার বাতাস—এমনই অভিযোগ পরিবেশকর্মী ও সুশীল সমাজের একাংশের।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ভুটভুটিগুলি কখনও ডিজেল, কখনও কেরোসিনে চলে। খরচ কমাতে অধিকাংশ চালকই কেরোসিন ব্যবহারে ঝুঁকেছেন। ফলে ধোঁয়ার মাত্রা আরও বেড়েছে। জেলার বিভিন্ন শহরাঞ্চলে দিনের পর দিন এই যানগুলো প্রচণ্ড শব্দ ও বিষাক্ত ধোঁয়া ছড়িয়ে প্রশাসনের নজর এড়িয়ে চলাচল করছে। অভিযোগ, অধিকাংশ ভুটভুটিরই কোনও বৈধ কাগজপত্র নেই—নেই ফিটনেস সার্টিফিকেট বা দূষণ নিয়ন্ত্রণের ছাড়পত্র।
এক পরিবেশকর্মীর বক্তব্য, “ভুটভুটির ধোঁয়ায় কার্বন মনোক্সাইডসহ নানা বিষাক্ত গ্যাস থাকে। এগুলো বাতাসে মিশে মারাত্মক দূষণ ঘটাচ্ছে। নিয়মিত ধোঁয়া পরীক্ষা করে তবেই চলাচলের অনুমতি দেওয়া উচিত। না হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সুস্থ ও পরিচ্ছন্ন বাতাস থেকে বঞ্চিত হবে।” তাঁর আশঙ্কা, দীর্ঘমেয়াদে এই দূষণ জীবজগতের অস্তিত্বের জন্য বড় হুমকি হয়ে উঠতে পারে।
আরও একাধিক পরিবেশবিদ জানান, ভুটভুটির কালো ধোঁয়া শ্বাসযন্ত্রের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। বাতাসের সঙ্গে বিষাক্ত গ্যাস শরীরে ঢুকলে ফুসফুসে প্রদাহ, মাথাব্যথা ও নানা স্নায়বিক সমস্যার ঝুঁকি বাড়ে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের ওপর এর প্রভাব মারাত্মক। তবু অভিযোগ, ভুটভুটি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ চোখে পড়ছে না।
ভুটভুটি চালক রতন মণ্ডল বলেন, “৬০–৭০ হাজার টাকায় রাস্তার ধারে গজিয়ে ওঠা গ্যারেজগুলোতে ভুটভুটি তৈরি হয়। সেখান থেকেই আমরা গাড়ি কিনি। কম খরচে মাল পরিবহন করা যায় বলেই এই গাড়ির চাহিদা।” স্থানীয়দের দাবি, প্রশাসনিক নজরদারির অভাবে অনেক ভুটভুটি নিয়ম ভেঙে ওভারলোডিং করে শহরের ভিতর দিয়ে চলাচল করছে, যা দুর্ঘটনার ঝুঁকিও বাড়াচ্ছে।
এদিকে প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, বিষয়টি নিয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে। এক আধিকারিক বলেন, “ভুটভুটির কাগজপত্র নেই—এমন অভিযোগ আমরা পেয়েছি। এগুলো কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় বা ধাপে ধাপে ব্যাটারি চালিত যানে রূপান্তর করা যায়, সে বিষয়ে পরিকল্পনা করা হচ্ছে।” তবে কবে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হবে, তা নিয়ে সংশয়ে সুশীল সমাজ ও পরিবেশবিদরা।
অনিয়ন্ত্রিত, বেআইনি ও লাইসেন্সবিহীন ভুটভুটির দাপটে আজ দক্ষিণ দিনাজপুরের বাতাস বিষাক্ত। কালো ধোঁয়ার চাদরে ঢেকে যাচ্ছে শহর, বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। প্রশাসনিক উদাসীনতা কাটিয়ে দ্রুত কঠোর ব্যবস্থা না নিলে, পরিবেশের সঙ্গে সঙ্গে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জীবনও পড়তে পারে গুরুতর সংকটে—এমনই আশঙ্কা সর্বত্র।
















