নদিয়া জেলার গয়েশপুর পুরসভায় নাগরিক পরিষেবা বিপন্ন হওয়া ও লাগামহীন দুর্নীতির অভিযোগে তোলপাড় রাজনৈতিক মহল। অভিযোগের ভিত্তিতে গয়েশপুর পুরসভার পুরো বোর্ডকে শোকজ নোটিস পাঠাল পূর্ত উন্নয়ন নিগম। শোকজ লেটার আসতেই স্বস্তি ও খুশির আবহ গয়েশপুর পুরসভার ১১ জন তৃণমূল কাউন্সিলরের মধ্যে।
অভিযোগ, পুরসভার বোর্ড মিটিং না ডেকেই খামখেয়ালি ভাবে পুরো প্রধান নিজের ইচ্ছেমতো পুরসভা চালাচ্ছেন। ২০২৩–২৪ এবং ২০২৪–২৫ অর্থবর্ষে কোনও অডিট না করেই বা হিসেব নিকেশ না দিয়েই পুরসভার অর্থ ব্যয় করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পাশাপাশি নাগরিক পরিষেবা—পানীয় জল, নিকাশি, রাস্তা সংস্কারসহ একাধিক পরিষেবার মান মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলেও দাবি কাউন্সিলরদের একাংশের।
এই সমস্ত অভিযোগ নিয়ে এর আগেও একাধিকবার সরব হয়েছিলেন গয়েশপুর পুরসভার তৃণমূল পরিচালিত বিরোধীশূন্য বোর্ডের ১৮ জন কাউন্সিলরের মধ্যে ১১ জন। তাঁরা দলীয় নেতৃত্বকে লিখিত ও মৌখিকভাবে বারবার বিষয়টি জানিয়েছিলেন এবং বর্তমান পুরো প্রধানকে এই পথ থেকে সরে আসার অনুরোধ করেছিলেন বলে জানা যায়। তবে তাতে কোনও পরিবর্তন না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত পূর্ত উন্নয়ন নিগমের দ্বারস্থ হওয়া হয়।
পূর্ত উন্নয়ন নিগমের শোকজ নোটিসে কীভাবে বোর্ড মিটিং ছাড়াই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, কেন অডিট সম্পন্ন হয়নি এবং কোন কোন খাতে অর্থ ব্যয় করা হয়েছে—এই সব বিষয়ে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে বলে সূত্রের খবর।
শোকজ লেটার পাওয়ার পর ১১ জন তৃণমূল কাউন্সিলর দলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। তাঁদের বক্তব্য, “দীর্ঘদিন ধরে আমরা যে অভিযোগগুলো তুলছিলাম, অবশেষে তার প্রশাসনিক স্বীকৃতি মিলল। আশা করছি, এতে গয়েশপুর পুরসভার প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ফিরবে।”
গয়েশপুর শহর তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি তথা গয়েশপুর পুরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর ও প্রাক্তন পুরো প্রধান মরন দে বর্তমান পুরো প্রধানকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেন। তিনি বলেন, “পুরসভা কোনও ব্যক্তির খেয়ালখুশিতে চলতে পারে না। বোর্ডকে পাশ কাটিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া গণতান্ত্রিক কাঠামোর পরিপন্থী। দলের কাছে আমরা যে দাবি তুলেছি, তা সময়মতো সঠিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমেই নিষ্পত্তি হবে বলে আশা রাখি।”
বর্তমান উপ–পুরো প্রধান মানিক পাল-সহ একাধিক মহিলা কাউন্সিলরও একই সুরে কথা বলেন। তাঁদের মতে, নাগরিকদের স্বার্থে পুরসভায় শৃঙ্খলা ও স্বচ্ছতা ফেরানো জরুরি। প্রয়োজনে দলীয় স্তরে কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক—এই দাবিও তাঁরা তোলেন।
যদিও গোটা বিষয়টি নিয়ে সংবাদমাধ্যমের সামনে কোনও মন্তব্য করতে চাননি গয়েশপুর পুরসভার পুরো প্রধান সুকান্ত চ্যাটার্জি। তাঁর নীরবতা নতুন করে জল্পনা বাড়িয়েছে রাজনৈতিক মহলে।
এখন দেখার, পূর্ত উন্নয়ন নিগমের শোকজ নোটিসের জবাব কীভাবে দেয় গয়েশপুর পুরসভা এবং দলের শীর্ষ নেতৃত্ব এই পরিস্থিতিতে কী সিদ্ধান্ত নেয়। প্রশাসনিক তদন্তের পর কি বদলাবে গয়েশপুর পুরসভার নেতৃত্ব—সেই দিকেই তাকিয়ে শহরবাসী।












