এষণা কুন্ডু, পলিটিক্যাল ডেস্ক ; ২০১৯ সালে বিজেপি যোগ দিয়ে ধর্মীয় বিভাজনের রাজনীতি করেছেন, আর বর্তমানে ফান্ডামেন্টাল রাজনীতি করছেন—এমন অভিযোগ ছুঁড়ে কার্যত বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন ফিরহাদ হাকিম। সংহতি দিবসের দিনেই মসজিদের সিলান্যাস করাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। সেই ইস্যুকেই ঘিরে ভরতপুরের বিধায়ক হুমায়ূন কবীরকে সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত নিল তৃণমূল কংগ্রেস।
ফিরহাদ হাকিম প্রশ্ন তুলেছেন, “কেউ কোথাও নিজের টাকায় মসজিদ করল করতেই পারেন। কিন্তু দলের বিধায়ক সংহতি দিবসের তারিখটাকেই বেছে নিলেন সিলন্যাসের জন্য কেন? আপনি তো স্কুল কলেজও করতে পারতেন। দেশের মানুষ, বাংলার মানুষ কি শুধু এইসব ধর্মান্ধতা নিয়েই থাকবে? এগিয়ে যাবে না?”
ঘটনার সূত্রপাত বেলডাঙায় মসজিদের সিলান্যাস অনুষ্ঠানকে ঘিরে। অভিযোগ, সংহতি দিবসের দিনেই ইচ্ছাকৃতভাবে ওই সিলান্যাস অনুষ্ঠিত হয়েছে, যা রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত সংবেদনশীল ও ধর্মীয় উগ্রতার পরিবেশ তৈরি করতে পারে। তৃণমূলের তরফে দাবি—রাষ্ট্রীয় সম্প্রীতির দিনে এমন পদক্ষেপ বিজেপির বিভাজনমূলক রাজনীতির হাতে খেলা।
“২০১৯ সালে বিজেপিতে যোগ দিয়ে ধর্মীয় বিভাজনের রাজনীতি করেছেন” — ক্ষুব্ধ ফিরহাদ
ফিরহাদ হাকিমের সুর স্পষ্ট ও তীব্র। তাঁর অভিযোগ—
“২০১৯ সালে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর থেকেই উনি ধর্মীয় বিভাজনের রাজনীতি করে এসেছেন। এখন আবার মৌলবাদী রাজনীতি করছেন। কেউ নিজের টাকায় মসজিদ করলে আপত্তি নেই। কিন্তু সংহতি দিবসের দিনটাকেই বেছে নেওয়ার পিছনে উদ্দেশ্য স্পষ্ট। স্কুল-কলেজ তৈরি করলেই তো মানুষের উপকার হতো।”
“বাবরি ধ্বংসের স্মৃতি উস্কে দিতে চাইছেন”
তিনি আরও বলেন, “বাবরি মসজিদ করার কথা বলে বাবরি ধ্বংসের স্মৃতি উসকে দিতে চাইছেন তিনি। এর পিছনে আমরা মনে করি বিজেপি আছে। যারা হিন্দু মুসলিম বিভাজনের রাজনীতি করছে হুমায়ূনকে সামনে রেখে।” তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, “দলের সঙ্গে হুমায়ূনের কোনও সম্পর্ক থাকবে না। এটা দলের চেয়ারপারসন আর জেনারেল সেক্রেটারির সিদ্ধান্ত।”
ফিরহাদ হাকিম প্রশ্ন তুলেছেন হুমায়ূন কবীরের ভূগোল নিয়েও। “উনি থাকেন রেজিনগরে, বিধায়ক ভরতপুরের। আর বেলডাঙায় কেন মসজিদ করবেন?” তাঁর অভিযোগ, “কারণ ওখানে কিছু মাস আগেও টেনশন তৈরির চেষ্টা করেছিল বিজেপি। এখন উনি সেটাকে উসকাতে চাইছেন।”
এখানেই থামেননি রাজ্যের মন্ত্রী। তাঁর অভিযোগ, “এই বিভাজনের রাজনীতি করে উনি বাংলায় ডাঙ্গা লাগানোর চেষ্টা করছেন। বিজেপিকে ডিভিডেন্ড দিচ্ছেন। এটা তৃণমূল কংগ্রেস মেনে নেবে না, প্রতিবাদ করবে, প্রতিরোধ করবে।”
দলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন
ফিরহাদ জানান, তৃণমূল কংগ্রেস পরিষ্কার সিদ্ধান্ত নিয়েছে—“দলের সঙ্গে হুমায়ূন কবীরের আর কোনও সম্পর্ক থাকবে না। দলের চেয়ারপারসন আর জেনারেল সেক্রেটারির সিদ্ধান্ত এটি। বিভাজনের রাজনীতি রোখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পিছপা হবে না তৃণমূল।”
হুমায়ূন কবীরকে সাসপেন্ড করার মাধ্যমে স্পষ্ট বার্তা দিল তৃণমূল—দলের ভেতর থেকেও ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতি বরদাস্ত করা হবে না। সংহতি দিবসের দিনেই মসজিদের সিলান্যাসকে তৃণমূল নেতৃত্ব দেখছে এক সুপরিকল্পিত সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তৈরির প্রচেষ্টা হিসেবে। অভিযোগের তীর বিজেপির দিকে—তারা হিন্দু-মুসলিম বিভাজনের রাজনীতি করে রাজনৈতিক লাভে আগ্রহী, এবং সেই পথেই হুমায়ূনকে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে দাবি টিএমসি নেতৃত্বের।
হুমায়ুনের প্রতিক্রিয়া
অন্যদিকে হুমায়ুন কবির জানিয়েছেন ফিরহাদ হাকিমের কথার জবাব দেব না। আগামীকাল দল ছাড়ছি, ২২ তারিখ নতুন দলের ঘোষণা করব। ডেকে এনে অপমান করা হয়েছে , আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। কাল অথবা আগামী সোমবার বিধায়কপদে ইস্তফা দেবেন হুমায়ুন।
তিনি আরও বলেন, ‘আগামী বিধানসভা ভোটে ১৩৫ আসনে লড়ব। বিজেপির বিরুদ্ধেও লড়ব, তৃণমূলের বিরুদ্ধেও লড়ব। তৃণমূলের হিম্মত থাকলে আমার মোকাবিলা করুক’।
রাজনৈতিক অন্দরে জোর জল্পনা—সংহতি দিবসে সাম্প্রদায়িক ইস্যুকে উস্কে দিয়ে রাজ্যে অশান্তি তৈরি করার চেষ্টা কি শরীরী ভাষায়ই প্রকাশ পেল? তৃণমূলের সিদ্ধান্তে স্পষ্ট, দল ভিতরে-বাইরে কোনও অবস্থাতেই ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতি মেনে নিতে রাজি নয়।














