২৬ শে নভেম্বর, এষণা কুন্ডু , নিউজ ডেস্ক ; গোপন সূত্রে খবরের ভিত্তিতে বড়সড় সাফল্য পেলো মীরা ফাঁড়ির পুলিশ। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কালীগঞ্জের পলাশী মীরা রেলগেট এলাকা থেকে প্রায় ২ কেজি ৪০০ গ্রাম হেরোইন সহ দুই যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। উদ্ধার হওয়া মাদকদ্রব্যের আনুমানিক বাজারমূল্য আড়াই কোটি টাকার বেশি বলে প্রাথমিকভাবে অনুমান করেছে পুলিশ প্রশাসন। এর ফলে নদীয়া জেলার বেড়ে ওঠা মাদক পাচার চক্রের কার্যকলাপ আবারও সামনে এসে পড়ল।
ধৃত দু’জন হল আতাবুর মুন্সী (২৯) ও সামিউল শেখ (২৪)। দু’জনেই কালীগঞ্জ থানার বড় চাঁদ ঘর এলাকার বাসিন্দা। দীর্ঘদিন ধরেই এরা মাদক ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিল বলেই পুলিশের অনুমান। সূত্রের খবর, এদিন সন্ধ্যায় বাইকে চেপে নলদহ অঞ্চল থেকে পলাশী মীরাবাজারের দিকে যাচ্ছিল ওই দুই যুবক। সেই সময়ই গোপন তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ মীরাহাট গোবিন্দপুর মাঠ সংলগ্ন রেলগেট এলাকায় নাকা-চেকিং শুরু করে।
পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, তল্লাশির সময় ওই দুই যুবকের আচরণ সন্দেহজনক মনে হওয়ায় তাদের থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এরপর পুলিশ তাদের ব্যাগ খুলতেই মেলে পাঁচটি আলাদা প্যাকেটে ভরা হেরোইন। সঙ্গে সঙ্গে তাদের গ্রেপ্তার করা হয় এবং মাদকদ্রব্য বাজেয়াপ্ত করা হয়। উদ্ধার হওয়া প্যাকেটগুলির মোট ওজন দাঁড়ায় প্রায় ২ কেজি ৪০০ গ্রাম।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার ডিএসপি ডিএনটি দেবাশীষ চট্টরাজ, সিআই নাকাশিপাড়া মাহিদুল ইসলাম, মীরা ফাঁড়ির আইসি ইবাদুর রহমান সহ একাধিক পুলিশ আধিকারিক। পুরো আইনি প্রক্রিয়া মেনে মাদকদ্রব্য জব্দ করা হয় এবং ধৃতদের পুলিশের হেফাজতে নেওয়া হয়।
পুলিশ জানান, “মাদক চক্রের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গোপন সূত্রের তথ্যের ভিত্তিতে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে আজ এই দুই যুবককে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়েছে। উদ্ধার হওয়া হেরোইনের আন্তর্জাতিক বাজারমূল্য আড়াই কোটি টাকারও বেশি। ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। বড় মাদক চক্রের যোগসূত্র খুঁজতে তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে।”
পুলিশের দাবি, এরা শুধু পরিবাহক নয়, বরং ঘনিষ্ঠ মাদক ব্যবসায়ী নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত। এই চক্রের মূল সূত্রধর কারা, কোথায় থেকে মাদক সংগ্রহ করা হয় এবং কোথায় তা পাচার করা হচ্ছিল— সেই সব দিকেই নজর রেখে তদন্ত শুরু করেছে জেলা পুলিশ। ধৃতদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের একাধিক ধারায় মামলা রুজু হয়েছে।
সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক মাস ধরে কালীগঞ্জসহ নদীয়ার বিভিন্ন এলাকায় মাদক পাচারের প্রবণতা বাড়ছিল। এই ঘটনার পর এলাকাবাসীর অনেকে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন। পাড়ার যুবসমাজকে বাঁচাতে পুলিশের নিয়মিত অভিযান চালানো অত্যন্ত জরুরি বলে মত স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের।
অন্যদিকে, জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আগামী দিনে আরও সক্রিয়ভাবে মাদকবিরোধী অভিযান চালানো হবে। সীমান্তবর্তী জেলা হওয়ায় বাংলাদেশ ও অন্য রাজ্য হয়ে মাদক প্রবেশের সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই সীমান্তের বিভিন্ন সংযোগ পথ ও সম্ভাব্য রুটে নজরদারি আরও বাড়ানো হচ্ছে।
উদ্ধার হওয়া হেরোইন ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। ধৃত দুই যুবককে বুধবার কৃষ্ণনগর আদালতে তোলা হবে বলে জানা গেছে। তদন্তে নতুন কোনও তথ্য উঠে এলে আরও গ্রেপ্তারির সম্ভাবনা রয়েছে।
মাদকবিরোধী এই সফল অভিযানে পুলিশের তৎপরতা জেলার মানুষকে আশ্বস্ত করেছে, তবে একই সঙ্গে প্রশ্নও তুলেছে — এত বড় মাদককারবার চলছিল ঠিক কীভাবে? তদন্তের অগ্রগতিতেই সামনে আসবে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য, এমনটাই মনে করছে পুলিশ মহল।
















