২৬ শে নভেম্বর, এষণা কুন্ডু , নিউজ ডেস্ক ; নভেম্বরের শুরুতেই শীতের আমেজ স্পষ্টভাবে অনুভূত হচ্ছে উত্তরবঙ্গের জেলা দক্ষিণ দিনাজপুরে । ভারত–বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন এই জেলার জনজীবনে ভোর ও বিকেলের পরে ঠান্ডার দাপট ক্রমেই বেড়েছে। আর এই আবহওয়াই জমিয়ে তুলেছে জেলার শীতবস্ত্রের বাজার। জেলার বিভিন্ন প্রান্তে ছোট-বড় বাজার এবং অস্থায়ী দোকানে শীতবস্ত্রের চাহিদা বাড়তে শুরু করেছে, আর সেই সুযোগে ব্যবসায়ীদের মুখেও ফুটেছে তৃপ্তির হাসি।
জেলার বস্ত্র ব্যবসায়ীদের দাবি, প্রতিবছর নভেম্বরের শেষের দিক থেকে শীতবস্ত্রের বিক্রি জমতে শুরু করে। তাই আগেভাগেই কলকাতার পাশাপাশি বিভিন্ন পাইকারি বাজার থেকে ব্যবসায়ীরা শীতবস্ত্র সংগ্রহ করে রাখেন। তবে এবছর শীতের আগমন স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক আগে হওয়ায় বাজারেও আগেভাগেই ক্রেতাদের ভিড় দেখা যাচ্ছে।
বালুরঘাট শহরের এক বস্ত্র ব্যবসায়ী জানান,
“শীত এবছর এত দ্রুত পড়বে আমরা ভাবতেই পারিনি। গত বছরের কিছু স্টক ইতিমধ্যেই বিক্রি হয়ে গেছে। দু-এক দিনের মধ্যেই আবার কলকাতা থেকে নতুন মাল আনতে হবে। যদি শীত এমনই থাকে তবে এবছর রেকর্ড বিক্রি হবে বলে আশা করছি।”
একই দৃশ্য দেখা যাচ্ছে জেলার গ্রামীণ এলাকাগুলিতেও। পতিরামের এক বস্ত্র বিক্রেতার কথায়,
“শীত আগে আসায় বাজারও আগেই জমে উঠেছে। এখনও পুরো শীত সামনে রয়েছে—তাই বিক্রি নিয়ে আমরা খুবই আশাবাদী।”
ব্যবসায়ী মহলের অনুমান,
ব্যবসায়ীরা অনুমান করছেন এবার শীতবস্ত্র বিক্রি গত বছরের তুলনায় অন্তত ৪০–৫০ শতাংশ বাড়তে পারে। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত ক্রেতাদের মধ্যে চাহিদা বেশি দেখা যাচ্ছে। গঙ্গারামপুরের এক ব্যবসায়ী বলেন,
“গত কয়েক বছর শীতবস্ত্র বিক্রি খুব একটা ভালো হয়নি। কিন্তু এবার শুরুটাই দারুণ। অনেকেই প্রয়োজনীয় জিনিস এখন কিনছেন, আর বাকি জিনিসপত্রের জন্য অপেক্ষা করছেন জেলার বিভিন্ন মেলায় কেনাকাটার জন্য। কারণ মেলাগুলিতে কম দামে ভালো শীতের পোশাক পাওয়া যায়।”
প্রসঙ্গত, জেলার বিভিন্ন প্রান্তে শিগগিরই আয়োজন হতে চলেছে শীতকালীন মেলা। শাল, সোয়েটার, থার্মাল, জ্যাকেট, মাফলার থেকে শুরু করে শিশুদের শীতের পোশাক—সবই মিলবে সাশ্রয়ী দামে। ফলে ডিসেম্বর–জানুয়ারিতে ক্রেতাদের চাপ আরও বাড়বে বলে ধারণা ব্যবসায়ীদের।
মাঠের পরিস্থিতিতেও দেখা গেছে, সকাল-বিকেলে সাধারণ মানুষ সোয়েটার, শাল ও জ্যাকেট পড়ে বাইরে বেরোচ্ছেন। বিশেষত ছাত্রছাত্রী, অফিসযাত্রী ও শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে এর ব্যবহার বেশি। অনেক পরিবার আবার শীতে আত্মীয়স্বজনকে উপহার দেওয়ার জন্যও শীতবস্ত্র কিনে রাখছেন।
স্থানীয় আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২ থেকে ৩ সপ্তাহ জুড়ে জেলাজুড়ে শীতের দাপট বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে ব্যবসায়ীদের আশাবাদ আরও বেড়েছে।
জেলা বস্ত্র ব্যবসায়ী সমিতির এক কর্মকর্তা জানান,
“এবছর শীত আগেভাগে পড়ায় ব্যবসায়ীদের মধ্যে উৎসাহ দেখা যাচ্ছে। বিক্রি বাড়লে জেলার আর্থিক বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। তবে দাম যেন নিয়ন্ত্রণে থাকে সেদিকে নজর দেওয়া জরুরি।”
সব মিলিয়ে, দক্ষিণ দিনাজপুরে এই আগাম শীত শুধু আবহাওয়াই বদলায়নি, হাসি এনে দিয়েছে ব্যবসায়ীদের মুখেও। শীত যত বাড়বে, ততই বাড়বে শীতবস্ত্র বিক্রির গতি—এমনটাই প্রত্যাশা জেলার বাজার ব্যবসায়ীদের।















