Read More

প্রকাশ্যে রাস্তায় মাংস কাটায় বাড়ছে পরিবেশ ও দৃশ্য দূষণ

২৬ নভেম্বর, এষণা কুন্ডু , নিউজ ডেস্ক; যত্রতত্র প্রকাশ্যে মাংস কাটা এবং দোকানের সামনে খোলা অবস্থায় মাংস ঝোলানোর প্রবণতা ফের.....

Public meat cutting on the streets is increasing environmental and visual pollution
Public meat cutting on the streets is increasing environmental and visual pollution

২৬  নভেম্বর, এষণা কুন্ডু , নিউজ ডেস্ক; যত্রতত্র প্রকাশ্যে মাংস কাটা এবং দোকানের সামনে খোলা অবস্থায় মাংস ঝোলানোর প্রবণতা ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলাজুড়ে। এর ফলে শুধু দৃশ্য দূষণই নয়, শিশু ও কিশোরদের মনে তৈরি হচ্ছে নেতিবাচক মানসিক প্রভাব— এমনই অভিযোগ তুলছেন পরিবেশবিদ, মনোবিদ এবং অভিভাবক মহল।

গত কয়েক বছর আগে দেশের সর্বোচ্চ আদালত একটি জনস্বার্থ মামলার প্রেক্ষিতে স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছিল যে কোনও মাংসের দোকান রাস্তায় প্রকাশ্যে মাংস কাটতে পারবে না, কিংবা কাটা পশুর দেহ খোলা অবস্থায় ঝুলিয়ে রাখতে পারবে না। দোকান সম্পূর্ণরূপে আচ্ছাদিত রাখতে হবে এবং ক্রেতারা ছাড়া অন্য কেউ যেন রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে সেই দৃশ্য দেখতে না পান— এমনই নির্দেশ ছিল আদালতের। পাশাপাশি, প্রতিটি পুরসভা ও পঞ্চায়েতে নির্দিষ্ট স্পট তৈরির কথা বলা হয়, যেখানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মাংস কাটা হবে এবং বর্জ্য নিষ্পত্তির থাকবে সঠিক ব্যবস্থা।

দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা প্রশাসন প্রথমদিকে এই নির্দেশ বাস্তবায়নে বিভিন্ন এলাকায় কড়া অভিযান চালায়। বাজারে খোলা মাংস ঝোলানো নিয়ে একাধিক দোকানকে নোটিসও দেওয়া হয়। কিন্তু অভিযানের ধারাবাহিকতা বজায় না থাকায় পরিস্থিতি ফের আগের জায়গায় ফিরে গেছে বলে অভিযোগ। জেলার বৃহত্তম শহরগুলি— বালুরঘাট, গঙ্গারামপুর, বুনিয়াদপুর, হিলি, কুমারগঞ্জ, তপন, কুশমন্ডি— সহ প্রায় সব ব্লক এলাকাতেই রাস্তাঘাট, হাট ও বাজারে নির্বিচারে মাংস কাটা ও খোলা অবস্থায় মাংস রাখার ঘটনা প্রতিনিয়ত দেখা যাচ্ছে।

পরিবেশবিদদের মতে, এই দৃশ্য শুধু নান্দনিকতার ক্ষতি নয় বরং ‘দৃশ্য দূষণ’-এর এক বড় উদাহরণ। রক্ত, কাটা অঙ্গ, পশুর দেহাংশ খোলা রাস্তায় পড়ে থাকা বা ঝুলে থাকা মানুষের মানসিক চাপ বাড়ায় এবং শিশুদের সংবেদনশীল মনে তৈরি করে দীর্ঘস্থায়ী দুশ্চিন্তা, ভয় বা হিংসাত্মক প্রবণতা। মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, ছোটবেলার ভিসুয়াল ট্রমা ভবিষ্যতে আচরণগত সমস্যা তৈরি করতে পারে। অনেক শিশুই এই ধরনের দৃশ্য দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে, কেউ কেউ আবার কৌতূহলবশে হিংসাত্মক মনোভাব গড়ে তোলে— যা মোটেই সুস্থ সমাজ গঠনের পক্ষে ভালো লক্ষণ নয়।

এই সমস্যার সঙ্গে যোগ হয়েছে পরিবেশ দূষণের আশঙ্কা। খোলা জায়গায় মাংস কাটার ফলে রক্ত ও বর্জ্য রাস্তায়, নালায় বা আশেপাশের জলে মিশে গিয়ে সৃষ্টি করে জল দূষণ। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, দোকানের পাশেই কাটা মাংসের অবশিষ্টাংশ বা পাখির পালক ছড়িয়ে থাকে, যা থেকে বাড়ে দুর্গন্ধ, মাছি-মশার উপদ্রব এবং রোগের ঝুঁকি। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, “প্রতিদিনই বাচ্চাদের নিয়ে রাস্তা দিয়ে যেতে হয়। যেভাবে প্রকাশ্যে পশুর দেহ ঝুলে থাকে বা কাটা হয়— তাতে শিশুরা ভয় পায়, বমি বমি লাগে। প্রশাসনের কি এ বিষয়ে নজর দেওয়ার সময় নেই?”

জেলা জুড়ে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও অভিযোগ করছে যে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও বেশিরভাগ দোকানে এখনো মাংস কাটার সময় কাঁচ দিয়ে ঢেকে রাখার ব্যবস্থা নেই। পরিবেশপ্রেমীদের দাবি, প্রশাসন, পুরসভা ও পঞ্চায়েত দীর্ঘদিন ধরে এ বিষয়ে সক্রিয় ভূমিকা নেয়নি। তারা আরও বলছেন, শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য এবং পরিবেশ রক্ষার জন্য এখনই দরকার বৃহৎ মাত্রায় জনসচেতনতা অভিযান।

এক পরিবেশ বিশেষজ্ঞের কথায়, “প্রকাশ্যে মাংস কাটার দৃশ্য শুধুমাত্র নোংরামি বা বিরক্তির কারণ নয়, এটি ‘সাইকোলজিকাল পলিউশন’-এর অন্যতম উৎস। বিশেষ করে শিশুদের ওপর এর প্রভাব অত্যন্ত বিপজ্জনক। তাদের মস্তিষ্ক তখন গঠনপর্বে থাকে। হঠাৎ করে রক্তাক্ত দৃশ্য বা কাটা দেহ দেখা তাদের মধ্যে ভয়, উদ্বেগ, আক্রমণাত্মক আচরণ বা দুঃস্বপ্নের প্রবণতা বাড়াতে পারে।”

মনোবিশেষজ্ঞদের মতে, শিশুরা প্রকৃতিগতভাবে সহানুভূতিশীল। কোনও প্রাণীর মৃত্যুর ভয়ঙ্কর দৃশ্য সামনে দেখলে তাদের মনে জন্মাতে পারে দুঃখ বা ট্রমা। অন্যদিকে, একই দৃশ্য বারবার দেখলে তা অনেক শিশুর কাছে ‘নরমাল’ বলে মনে হতে পারে, যা থেকে ভবিষ্যতে গড়ে উঠতে পারে নির্মমতা বা হিংসাত্মক মানসিকতা।

এই অবস্থায় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন সাধারণ মানুষ।বাচ্চারা স্কুলে যাওয়ার সময় এইসব দৃশ্য দেখে ভীষণ ভয় পায়।

পরিবেশবিদ, মনোবিজ্ঞানী ও অভিভাবকদের অভিমত— পরিস্থিতি আর হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই।
ছোটদের সুরক্ষা, পরিবেশ রক্ষা এবং স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখতে জরুরি ভিত্তিতে আদালতের নির্দেশ কঠোরভাবে বাস্তবায়ন, নির্দিষ্ট মাংস কাটার জোন তৈরি, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নতি, দোকান আচ্ছাদিত রাখার বাধ্যবাধকতা এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধি।

দক্ষিণ দিনাজপুরবাসীর আশা— প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা নেবে, যাতে রাস্তাঘাটে আর না দেখা যায় পশুর কাটা দেহ বা রক্তাক্ত দৃশ্য, এবং শিশুদের মনে না জমে কোনও নেতিবাচক প্রভাব।

 

 

Thank You for Reading – Political Daily

Thank you for taking the time to read our news at Political Daily.
We appreciate your trust in our platform as your source for reliable and timely Indian news.Your support encourages us to continue delivering accurate, unbiased, and impactful stories that matter to you.

Stay informed. Stay connected.
– Political Daily