এষণা কুন্ডু , পলিটিক্যাল ডেস্ক : কলকাতা পুরসভার বিরুদ্ধে মারাত্মক অভিযোগ বিজেপির। বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীর অভিযোগ স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন শুরু হতেই জন্ম প্রমাণপত্র বিলি করা হয়েছে কলকাতা পৌরসভার তরফে। এমনকি এক মাসে কতগুলি জন্ম প্রমাণপত্র কাদের দেওয়া হয়েছে তা জানতে চেয়ে কলকাতা পুরসভার কাছে rti করেছেন বিরোধী দলনেতা ।
একদিকে কলকাতা পুরসভার বিরুদ্ধে বেআইনি জন্মসনদ বিতরণের অভিযোগ তুলেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, অন্যদিকে ফালতা বিধানসভা কেন্দ্রে বুথস্তরের অফিসার (BLO)-এর বিরুদ্ধে নারী নিগ্রহের অভিযোগ সামনে এনেছেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। দু’জনেরই দাবি — রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে অপব্যবহার করে ভোটার তালিকা প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে।
শুভেন্দু অধিকারীর বিস্ফোরক অভিযোগ:
বৃহস্পতিবার এক্স (সাবেক টুইটার)-এ শুভেন্দু অধিকারী লেখেন, “আমার জানা গেছে যে কলকাতা পুরসভা বেআইনি, অনৈতিক এবং অনৈতিকভাবে বিপুল সংখ্যায় জন্মসনদ বিতরণ করছে। এগুলি প্রকৃত নাগরিকদের জন্য নয়, বরং সেইসব সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের দেওয়া হচ্ছে, যাদের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।”
তাঁর অভিযোগ, “এটি নির্বাচনী তালিকা প্রভাবিত করার এক নগ্ন চেষ্টা এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে দুর্বল করার চক্রান্ত।” শুভেন্দুর বক্তব্য অনুযায়ী, জন্মসনদ একটি আইনসিদ্ধ নথি, যা সাধারণত নবজাতকদের জন্য বা খুবই বিরল ক্ষেত্রে দেরিতে নিবন্ধনের ক্ষেত্রে দেওয়া হয়। কিন্তু বর্তমানে এই সনদকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে নির্বাচনী প্রকৃতিকে বিকৃত করা হচ্ছে বলে দাবি তাঁর।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে শুভেন্দু অধিকারী স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে দুটি পদক্ষেপের কথা জানান। প্রথমত, তিনি কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরে গত ৩০ দিনে কতগুলি জন্মসনদ ইস্যু হয়েছে তার তথ্য জানতে আরটিআই দাখিল করেছেন। দ্বিতীয়ত, তিনি পুর কমিশনারের কাছে চিঠি লিখে ২০২৫ সালের ৬ অক্টোবর থেকে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত এবং ২০২৪ সালের একই সময়কালের তুলনামূলক তথ্য চেয়েছেন।
চাওয়া তথ্যের মধ্যে রয়েছে —
মোট কতটি জন্মসনদ ইস্যু হয়েছে,
পুরসভা এলাকার বাইরে বসবাসকারী ব্যক্তিদের কতটি সনদ দেওয়া হয়েছে,
২০০৭ সালের আগে জন্ম নেওয়া ব্যক্তিদের দেরিতে নিবন্ধনের সনদ সংখ্যা,
এবং সাম্প্রতিক নবজাতকদের জন্মসনদের পরিসংখ্যান।
বিরোধী দলনেতা সতর্ক করে বলেন, “১৯৬৯ সালের জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন লঙ্ঘনের যে কোনো প্রচেষ্টা কোনোভাবেই সহ্য করা হবে না।” পাশাপাশি তিনি নির্বাচন কমিশন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছেন “অবিলম্বে এই বেআইনি কর্মকাণ্ডের তদন্ত শুরু করার জন্য,” কারণ তাঁর দাবি অনুযায়ী, এটি “অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার এক পরিকল্পিত প্রচেষ্টা।”
সুকান্ত মজুমদারের অভিযোগে নতুন মোড়:
একই দিনে ফালতা বিধানসভা কেন্দ্র থেকে আরও এক গুরুতর অভিযোগ প্রকাশ্যে আসে। বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এক্স (সাবেক টুইটার)-এ লিখেছেন, “ফালতা বিধানসভা কেন্দ্রের বুথ নং ১৪৬-এ, BLO-র নাম ব্যবহার করে বুথ সভাপতি ও শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের সক্রিয় কর্মীরা ভোটার তালিকার এনুমারেশন ফর্ম বিলি করছেন।”
আরও মারাত্মক অভিযোগ করে তিনি জানান, “এক স্থানীয় মহিলা যখন তৃণমূল কর্মীর কাছ থেকে ফর্ম নিতে অস্বীকার করেন, তখন ওই কর্মী তাঁকে হুমকি দেন, তাঁর মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেন এবং জোর করে ওড়না টেনে তাঁর শালীনতা লঙ্ঘন করেন।” ঘটনাটি BLO-র সামনেই ঘটে বলে দাবি সুকান্তর, অথচ তিনি নাকি নীরব থেকে কোনো পদক্ষেপ নেননি।
বিজেপি রাজ্য সভাপতির অভিযোগ, “এই BLO-র বিরুদ্ধে এর আগেও একাধিক অভিযোগ উঠেছে, কিন্তু প্রশাসন তাঁর দায়িত্ব প্রত্যাহার করেনি।”
তিনি মুখ্য নির্বাচন আধিকারিকের (@CEOWestBengal) কাছে একটি নিরপেক্ষ, দ্রুত ও কঠোর তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।
তাঁর টুইটে সুকান্ত মজুমদার আরও লেখেন, “কালিঘাটের তথাকথিত ‘রাজপুত্র’-কে জানিয়ে রাখি — BLO-দের কিনে নেওয়া বা ভয় দেখিয়ে চুপ করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা এ বার সফল হবে না। পশ্চিমবঙ্গের নারীশক্তি এখন গণতন্ত্র রক্ষার লড়াইয়ে নামছে। প্রতিরোধ অনিবার্য।”
রাজনীতির পারদ চড়ছে:
শুভেন্দু ও সুকান্ত— দুই বিজেপি নেতার অভিযোগে রাজ্যের রাজনীতি আরও একবার তপ্ত হয়ে উঠেছে। বিজেপি শিবিরের দাবি, SIR প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রাজ্যে “ভুয়ো ভোটার” তৈরি ও প্রকৃত ভোটারদের নাম বাদ দেওয়ার খেলা চলছে। অন্যদিকে, তৃণমূল সূত্রে পাল্টা দাবি করা হয়েছে, “বিজেপি ভোটার তালিকা সংশোধনের প্রক্রিয়াকে ইস্যু বানিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াতে চাইছে।”
SIR প্রক্রিয়া শুরু হতেই রাজ্যের দুই প্রধান রাজনৈতিক শিবিরের মধ্যে নতুন সংঘাতের সূচনা হয়েছে। শুভেন্দু অধিকারী জন্মসনদ বিতরণে কারচুপির অভিযোগ তুলেছেন, সুকান্ত মজুমদার BLO-র বিরুদ্ধে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। এখন দেখার, নির্বাচন কমিশন এই সমস্ত অভিযোগের প্রেক্ষিতে কী পদক্ষেপ নেয় — কারণ একদিকে গণতন্ত্রের স্বচ্ছতা রক্ষার প্রশ্ন, অন্যদিকে রাজনৈতিক বিশ্বাসযোগ্যতার লড়াই।
















