এষণা কুন্ডু , পলিটিক্যাল ডেস্ক : রাজ্যে ভোটার তালিকা ঘিরে ফের তীব্র বিতর্ক। আসানসোলের ৭৮ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর তথা রাজ্য কার্যকরী কমিটির সদস্য অশোক রূদ্র দাবি করেছেন, তাঁর এবং তাঁর পরিবারের নামই উধাও হয়ে গেছে ২০০২ সালের ভোটার তালিকা থেকে। এমনকি প্রয়াত বাবা চণ্ডীদাস রূদ্র ও মা ঝর্ণা রূদ্রর নামও সেই তালিকায় নেই। অথচ, অশোকের অভিযোগ অনুযায়ী, “২০০২ সালে আমরা সবাই ভোট দিয়েছি, ভোটার কার্ডও ছিল। এখন হঠাৎ কেন বাদ দেওয়া হলো, বুঝতে পারছি না।”
অশোক রুদ্রর বক্তব্য,
তিনি বলেছেন “আমার প্রয়াত দাদু সতীশ রূদ্র স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন। স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ দেওয়ার কারণে রেলের চাকরি পর্যন্ত হারাতে হয়েছিল তাঁকে। আমাদের জন্মভিটে, বাড়ি, সবই এখানেই। আমরা রোহিঙ্গা নই, বাংলাদেশীও নই। তবুও তালিকা থেকে নাম উধাও — এটা পরিষ্কার ষড়যন্ত্র।”
তাঁর দাবি, ২০০২ সালের ভোটার তালিকা ত্রুটিমুক্ত নয়, বরং তাতে প্রচুর অসঙ্গতি রয়েছে। অথচ সেই ত্রুটিপূর্ণ তালিকাকেই ভিত্তি করে এখন SIR (Special Identification Revision) চালাচ্ছে নির্বাচন কমিশন। অশোকের অভিযোগ, “এই পদ্ধতিতে সাধারণ মানুষ ভীত হয়ে পড়ছেন। অনেকেই ভয়ের চাপে অসুস্থ হচ্ছেন, কেউ কেউ আত্মহত্যার পথ পর্যন্ত বেছে নিচ্ছেন। আমার কাছে পাসপোর্ট, জন্মসনদ, রেলের চাকরির সার্টিফিকেট—সব প্রমাণ আছে। আমি জমা দেব। কিন্তু সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে? তাঁদেরই সবচেয়ে বেশি হয়রানি হচ্ছে।”
তৃণমূল কাউন্সিলরের এই বক্তব্য ঘিরে স্বাভাবিকভাবেই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। অশোকের কথায়, “নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা প্রশ্নের মুখে। আমরা চাই, ত্রুটিপূর্ণ তালিকার বদলে হালনাগাদ যাচাই হোক, যাতে প্রকৃত নাগরিকদের নাম বাদ না পড়ে।”
অশোক রূদ্র তৃণমূলের রাজ্য কার্যকরী কমিটির সদস্য ছাড়াও দলের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। তিনি তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি, যুব তৃণমূল এবং তৃণমূল শিক্ষাসেলের রাজ্য নেতৃত্বেও ছিলেন। বর্তমানে তিনি আসানসোল পৌরনিগমের জনপ্রতিনিধি।
বিজেপি রাজ্য কমিটি সদস্যর প্রতিক্রিয়া
এই প্রসঙ্গে বিজেপির তরফে পাল্টা প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন রাজ্য কমিটির সদস্য কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য, “কাউন্সিলর অশোক রূদ্র এবং তাঁর পরিবারের নাম ২০০২ সালের ভোটার লিস্টে নেই — এটা সত্যি। তবে কেন নেই, সেটা তিনিই ভালো বলতে পারবেন। তখন তিনি বামপন্থী ছিলেন, রেল কলোনিতে থাকতেন। যদি সত্যিই নাম না থাকে, তবে সেটা রাজনৈতিক নয়, প্রশাসনিক ব্যাপার।”
কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায় আরও বলেন, “ভোটার তালিকা তৈরি করা কোনো রাজনৈতিক দলের কাজ নয়। এটি সম্পূর্ণ নির্বাচন কমিশনের অধীনে হয়। কমিশনের গাইডলাইন অনুযায়ী, ১২টি নথির মধ্যে যেকোনো একটি জমা দিলেই নাম অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব। কিন্তু তৃণমূল রাজনৈতিক বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে, সাধারণ মানুষকে ভুল পথে পরিচালিত করছে।”
তিনি আরও দাবি করেন, “এই মুহূর্তে দেশের ১২টি রাজ্যে SIR-এর কাজ চলছে। পশ্চিমবঙ্গেও একই নিয়মে তা চলছে। এখানে রাজনীতি করে লাভ নেই। সঠিক নথি জমা দিলেই নাম থাকবে তালিকায়।”
তৃণমূলের ক্ষোভ প্রকাশ
তৃণমূলের তরফে অবশ্য এই বক্তব্যে আরও ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে। অশোক রূদ্রর মন্তব্য, “আমরা ভারতীয় নাগরিক, স্বাধীনতা সংগ্রামীর পরিবার। যদি আমাদের নাম বাদ যায়, তবে সাধারণ মানুষের কী অবস্থা হবে বুঝে নেওয়া যায়। এটি মানুষের মর্যাদায় আঘাত। অনেক সাধারন মানুষ তারা কোথায় যাবেন? ভয় পেয়ে অনেকে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন। অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। যে পদ্ধতিতে, তাড়াহুড়ো করে ২০০২ এর ত্রুটপূর্ণ ভোটার তালিকাকে সামনে রেখে SIR হচ্ছে তারই বিরোধিতা করেন তিনি।”
২০০২ সালের ত্রুটিপূর্ণ ভোটার তালিকা নিয়ে শুরু হওয়া এই বিতর্ক ক্রমেই রাজনৈতিক মোড় নিচ্ছে। একদিকে বিজেপি বলছে, নিয়ম অনুযায়ী সব চলছে; অন্যদিকে তৃণমূল অভিযোগ তুলছে—এটি একটি “সুনির্দিষ্ট ষড়যন্ত্র” সাধারণ মানুষকে আতঙ্কিত করার।














