এষণা কুন্ডু , পলিটিক্যাল ডেস্ক ; কাঁকসা ব্লকে প্রশাসনিক নিরপেক্ষতা নিয়ে ফের রাজনৈতিক অস্থিরতা। একটি ঘরে তৃণমূল নেতাদের হাতে এনুমারেশন ফর্ম— এমনই একটি ছবি ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। অভিযোগ উঠেছে, ফর্মগুলি বিএলওদের (Booth Level Officer) হাতে থাকার কথা, অথচ তা শাসকদল তৃণমূলের নেতাদের হাতে পাওয়া যাচ্ছে। এই ঘটনার জেরে ক্ষোভে ফেটে পড়েছে বিজেপি। বৃহস্পতিবার কাঁকসা বিডিও অফিসের গেট আটকে ঘন্টাখানেকবিক্ষোভ দেখায় বিজেপি কর্মীরা।
বিজেপির দাবি
বিজেপির পূর্ব বর্ধমান জেলার সহ-সভাপতি রমণ শর্মা বুধবার রাতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবিটি পোস্ট করেন। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, এক ঘরের মধ্যে টেবিলে এনুমারেশন ফর্ম সাজানো, আর পাশে বসে আছেন তৃণমূল নেতা ভোলানাথ বিশ্বকর্মা ও কার্তিক সিং। বিজেপির দাবি, ঘটনাটি গলসি বিধানসভার কাঁকসার ৬৮ নম্বর বুথের। তাদের অভিযোগ, সরকারি নথিপত্র ও তথ্যপত্র এখন সরাসরি শাসকদলের হাতে পৌঁছে যাচ্ছে, যা নির্বাচন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতার জন্য গভীরভাবে উদ্বেগজনক।
অভিযোগ
রমণ শর্মার অভিযোগ, “এসআইআরের (Special Intensive Revision of Electoral Roll) কাজে প্রশাসন তৃণমূলের নির্দেশে চলছে। বিএলওরা সরকারি কর্মী হয়েও শাসকদলের হয়ে কাজ করছেন। যিনি ওই বুথের দায়িত্বে আছেন, সেই বিএলও দীপালী দে এই ঘটনায় কোনো জবাব দেননি। আমরা দাবি জানাচ্ছি, তাঁকে অবিলম্বে নির্বাচনের কাজ থেকে সরাতে হবে এবং ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত হোক।”
ঘটনার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সকালে কাঁকসা বিডিও অফিসের প্রধান গেট তালাবদ্ধ করে বিক্ষোভে বসে পড়ে বিজেপি কর্মীরা। তাঁরা শ্লোগান দেন, “নির্বাচনে নিরপেক্ষতা চাই”, “প্রশাসনকে দলীয় প্রভাবমুক্ত করতে হবে।” প্রায় এক ঘণ্টা পর কাঁকসার বিডিও সৌরভ গুপ্ত ঘটনাস্থলে এসে বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলেন এবং তদন্তের আশ্বাস দেন।
বিডিও জানান, “আমরা ইতিমধ্যেই ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছি। ঠিক কীভাবে এনুমারেশন ফর্ম ওই জায়গায় পৌঁছলো, সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত কিছু বলা সম্ভব নয়।”
শাসকদলের পতিক্রিয়া
অন্যদিকে, তৃণমূলের কাঁকসা ব্লক সভাপতি নব কুমার সামন্ত বিজেপির অভিযোগকে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন। তাঁর বক্তব্য, “বিজেপি মিথ্যা প্রচার চালিয়ে রাজনৈতিক লাভ তুলতে চাইছে। যেখানে ওরা ছবি তুলেছে, সেখানে কোনো এনুমারেশন ফর্ম ছিল না। ওদের নিজের ব্যর্থতা ঢাকতেই আমাদের বিরুদ্ধে বদনাম করছে। বিএলওকে ঘিরে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে বাজার গরম করা ছাড়া এগুলোর আর কোনো মূল্য নেই।”
তিনি আরও বলেন, “প্রশাসন নিয়ম মেনে কাজ করছে। বিজেপি এখন মানুষের সমর্থন হারিয়ে এই ধরনের নাটক সাজিয়ে নিজেদের প্রাসঙ্গিক রাখতে চাইছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার করে সংবাদ শিরোনামে আসাটাই এখন ওদের লক্ষ্য।”
ঘটনাকে ঘিরে এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। প্রশাসনিক মহল থেকে রাজনৈতিক মহল— সকলেই নজর রাখছেন তদন্তের অগ্রগতির দিকে। ভোটার তালিকা সংশোধন প্রক্রিয়ার (Enumeration Process) সময় এই ধরনের বিতর্ক প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে বলেও মনে করছেন পর্যবেক্ষক মহল।
তবে বিজেপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তদন্তের ফলাফল অনুযায়ী প্রয়োজন হলে তারা কমিশনের দ্বারস্থ হবে। অন্যদিকে, তৃণমূলের দাবি, “এই অভিযোগের মাধ্যমে বিজেপি নিজেদের রাজনৈতিক ব্যর্থতা ঢাকতে চাইছে।”
সব মিলিয়ে কাঁকসায় এনুমারেশন ফর্ম নিয়ে শাসক-বিরোধী তরজায় ফের একবার প্রমাণিত হলো, ২০২৬ সালের ভোটের আগে রাজ্য রাজনীতিতে প্রশাসনিক নিরপেক্ষতা নিয়েই তপ্ত হয়ে উঠছে বাংলার মাটি।














