কোলকাতা ; আশ্বিনের শেষ, কার্তিকের শুরু। হেমন্তের হালকা হিমে শীতের আগমনের বার্তা। সাল ১৯২৮—ঘোর ব্রিটিশ আমল, স্বাধীনতা তখনও দূরের স্বপ্ন। শারদোৎসব সদ্য শেষ, কলকাতার দুর্গাপুজো তখনও মূলত বনেদি বাড়িতেই সীমাবদ্ধ। সাধারণ মধ্যবিত্ত ঘরের মানুষের কাছে দেবীদর্শন ছিল অন্তরের আরাধনা, বাস্তবে অনেক দূরের।
এই প্রেক্ষিতেই মধ্য কলকাতার সারপেনটাইন লেনের ঘোষবাড়ি, বোসবাড়ি এবং আশেপাশের কয়েকটি পরিবারের প্রবীণরা সিদ্ধান্ত নেন—একটি এমন পুজোর আয়োজন করবেন যেখানে বাড়ির মেয়েরাও সক্রিয় ভূমিকা নেবেন। সেই থেকেই শুরু কোলকাতার প্রথম বারোয়ারি জগদ্ধাত্রী পুজোর। প্রায় সাতানব্বই বছর পার হয়ে গেল, তবু সেই পুজো আজও ঐতিহ্যের ধারা অটুট রেখে এগিয়ে চলেছে শতবর্ষের দিকে।
শুরু থেকেই এই পুজো সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক। সীমিত সামর্থ্যের মধ্যেও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থেকে ধারাবাহিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে বছর বছর। পুজোর সময় পাড়ার আত্মীয়স্বজনেরা একত্র হন, বিবাহিতারা বাপের বাড়ি ফেরেন, প্রবাসীরা পাঠান শুভেচ্ছা বার্তা।
এই পুজো “ত্রৈকালীনোবা” — তিন প্রহরে সম্পন্ন হয়। প্রথম প্রহরে সাত্ত্বিক, দ্বিতীয় প্রহরে রাজসিক, তৃতীয় প্রহরে তামসিক রীতিতে দেবীর আরাধনা হয়। শাস্ত্রানুসারে প্রতিমায় দেখা যায় মায়ের পদতলে ঋষিমুনিদের ও করিন্দ্রাসুরকে। ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পুরোহিত একাসনে বসে পূজা সম্পন্ন করেন।
আগে সন্ধ্যার আরতির পর হতো কালী কীর্তন ও সারারাতব্যাপী যাত্রাপালা—এ যেন এক উৎসবের মেলা। এখন সেসবের জায়গা নিয়েছে স্থানীয় নারীদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। তবু এক ঐতিহ্য আজও অক্ষুণ্ণ—দশমীতেই প্রতিমা বিসর্জন। একসময় নৌকায় করে মাঝগঙ্গায় গিয়ে মা জগদ্ধাত্রীকে বিসর্জন দেওয়া হতো। সময়ের পরিবর্তনে সেই রীতি হারিয়ে গেলেও মায়ের প্রতি ভক্তি ও ঐক্যের আবেগ আজও আগের মতোই অটুট।













