এষণা কুন্ডু, পলিটিক্যাল ডেস্ক:বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাসপাতাল সফর নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন । অসুস্থ বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু কে দেখতে মুখ্যমন্ত্রীর এই হাসপাতাল সফরকে তিনি “রাজনৈতীক নাটক ” ও “প্রচারমূলক ফটোশুট” বলে কটাক্ষ করেছেন।
শঙ্কর ঘোষের মতামত :
শঙ্কর ঘোষ জানান , “ আমি গণমাধ্যমের মাধ্যমেই জানতে পারি যে মূখ্যমন্ত্রী হাসপাতালে গিয়েছেন। সকালে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাকে খুব অল্প সময়ের নোটিসে মুখ্যমন্ত্রীর সফরের কথা জানিয়েছিল। আমি তখনই বলেছিলাম, এতে আমি সম্মতি দিচ্ছি না। খগেন মুর্মু সাহেব বর্তমানে আইসিইউতে ভর্তি রয়েছেন এবং তিনি কথা বলার অবস্থায় নেই। ফলে তাঁর সম্মতির প্রশ্নই ওঠে না।”
বিজেপি বিধায়কের অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রী হাসপাতালে এক মিনিটের মত ছিলেন এবং এই সময়ে তাঁর খগেন মুর্মুর স্যাথে কোনো কথপোকথন হয়নি। “আমি জানতে পেরেছি, মূখ্যমন্ত্রী মাত্র দেড় মিনিটেরও কম সময় ছিলেন তাঁর কেবিনে। সেই সময় মুখ্যমন্ত্রীর দলের মিডিয়া টিম ছবি তুলেছে, ভিডিও করেছে, তার পরেই সেইগুলো প্রচার ব্যাবহার করা হচ্ছে। এই সফর সম্পূর্ণ প্রচার মূলক, এর মধ্যে মানবিকতার কোনো ছোঁয়া নেই, ” এমনটাই বলেছেন শঙ্কর ঘোষ।
বিজেপি বিধায়কের অভিযোগ:
তিনি আরও অভিযোগ করে বলেছেন,“ যে মূখ্যমন্ত্রী নিজের প্রশাসনকে কার্যকর ভাবে বিপর্যয় মোকাবিলায় নামাতে পারেননি,সেই তিনি আজ হাসপাতালে গিয়ে ছবি তুলছেন। বিজেপি সাংসদ এর ওপর যখন তৃনমূল আশ্রিত গুন্ডারা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে, তখন এটি যে মুখ্যমন্ত্রীর ভান করা সহানুভূতি তা বাংলার মানুষ ভালোকরেই বুঝে ফেলেছে”।
উল্লেখ্য, উত্তরবঙ্গের বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু বর্তমানে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। বৃহস্পতিবার সকালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর শারীরিক অবস্থার খোঁজ নিতে যান। মুখ্যমন্ত্রীকে হাসপাতালে পৌঁছতে দেখা যায়, সঙ্গে ছিলেন রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকরাও। তিনি খগেন মুর্মুর চিকিৎসকদের সঙ্গে কিছু সময় আলোচনা করেন। কিন্তু বিজেপি শিবিরের দাবি, মুখ্যমন্ত্রী মূলত প্রচারের জন্যই এই সফরটি করেছেন।
শঙ্কর ঘোষ বলেন, “এটি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নোংরা রাজনীতির আরেকটি উদাহরণ। যাঁরা গত কয়েকদিন ধরে বিজেপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে, সেই তৃণমূল নেত্রীর এখন হাসপাতাল সফর করে সহানুভূতির নাটক করা শুধু ভোটের রাজনীতি। মানুষ এসব নাটক দেখে ফেলেছে।”
তিনি আরও যোগ করেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসন যদি সত্যিই মানুষের পাশে দাঁড়াত, তাহলে বিজেপির নেতাকর্মীদের ত্রাণ ও উদ্ধারকার্যে নামতে হত না। প্রশাসনের ব্যর্থতার কারণেই বিজেপি স্বেচ্ছাসেবকরা মাঠে নেমে কাজ করেছে। কিন্তু তার জন্য তাঁদের উপর তৃণমূলের গুন্ডারা হামলা চালিয়েছে। এরপর মুখ্যমন্ত্রী এসে হাসপাতালে নাটক করছেন — এটা বাংলার মানুষের সঙ্গে কৌতুক করা ছাড়া আর কিছুই নয়।”
বিজেপি বিধায়কের মতে, মুখ্যমন্ত্রীর এই সফরের মূল উদ্দেশ্য ছিল ক্যামেরার সামনে সহানুভূতিশীল মুখ দেখানো, যাতে তাঁর ভাবমূর্তি কিছুটা পাল্টানো যায়। কিন্তু বাস্তবে তা উল্টো প্রভাব ফেলবে বলেই মত শঙ্কর ঘোষের। তিনি বলেন, “এই ধরনের নাটক বা ফটোশুটে লাভ হবে না। মানুষ সব বুঝে গেছে। যতই ড্রামা করুন না কেন, বিজেপি বাংলার মানুষের পাশে ছিল, আছে এবং থাকবে। তৃণমূলের গুন্ডাগিরি বা ভয় দেখিয়ে বিজেপিকে রোখা যাবে না।”
বিজেপি বিধায়কের বার্তা:
শেষে তিনি স্পষ্ট বার্তা দেন, “আমরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনীতির নাটকীয়তা ও ভণ্ডামির বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাব। বিজেপি মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে কাজ করবে — যেভাবে খগেন মুর্মু সাহেব নিজের জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে মানুষের জন্য কাজ করেছেন, আমরা তাঁর সেই আদর্শ অনুসরণ করব।”
মুখ্যমন্ত্রীর এই হাসপাতাল সফর ঘিরে ইতিমধ্যেই রাজ্য রাজনীতিতে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে। তৃণমূল সূত্রে অবশ্য দাবি করা হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী শুধুমাত্র মানবিক কারণে সাংসদের শারীরিক অবস্থার খোঁজ নিতে গিয়েছিলেন। তবে বিজেপি শিবিরের বক্তব্য, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই সফর রাজনীতিরই অংশ, এবং “মানবিকতা”র আড়ালে তাঁর লক্ষ্য ছিল মিডিয়া প্রচার।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, উত্তরবঙ্গের রাজনীতিতে বিজেপি ও তৃণমূলের টানাপোড়েনের মাঝে এই হাসপাতাল সফর নতুন করে রাজনৈতিক সংঘাতকে উস্কে দিয়েছে।














