এষণা কুন্ডু,পলিটিক্যাল ডেস্ক :কোচবিহার জেলা আবারও তৃণমূল কংগ্রেসের অন্দরের গোষ্ঠী রাজনীতির উত্তাপে সরগরম। তুফানগঞ্জ ২ নং ব্লকে প্রকাশ্যে সামনে এলো গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে চাঞ্চল্যকর ঘটনা। সম্প্রতি তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব নতুন ব্লক কমিটির ঘোষণা করার পর থেকেই অশান্তির আগুন জ্বলছিল এলাকায়। সেই অশান্তি এ বার গিয়ে পৌঁছল প্রাক্তন ব্লক সভাপতি চৈতি বর্মন বড়ুয়ার বাড়ির দোরগোড়ায়।
অভিযোগ, নতুন সভাপতি হিসেবে নিরঞ্জন সরকারের নাম ঘোষণা হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই চৈতি বর্মনের কাকোয়ামারির বাড়িতে হামলা হয়। তাঁর অভিযোগ, তালা ভেঙে বাড়িতে ঢুকে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়। ঘরের একাধিক সামগ্রী ভাঙচুর করে নষ্ট করে দেওয়া হয়। চৈতির দাবি, এর পিছনে রয়েছেন নবনিযুক্ত সভাপতি নিরঞ্জন সরকার এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ অনুগামীরা। বিস্ফোরক সুরে চৈতি বর্মন বড়ুয়া বলেন— “এতদিন রাজনীতি করছি, কিন্তু এমন জঘন্য রাজনীতি জীবনে দেখিনি। দোষীদের অবিলম্বে শাস্তি চাই।”
উল্লেখযোগ্য বিষয়, বর্তমানে চৈতি বর্মন বড়ুয়া এবং নিরঞ্জন সরকার দু’জনেই কোচবিহার জেলা পরিষদের সদস্য। ফলে একই দলে থেকে তাঁদের মধ্যে দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে চলে আসায় কার্যত তৃণমূলের অন্দরের গোষ্ঠী রাজনীতির ছবি স্পষ্ট হচ্ছে। রাজনৈতিক মহলের মতে, এটি শুধু ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব নয়, বরং ব্লক কমিটি গঠনকে ঘিরে ভেতরের ক্ষমতার লড়াইয়ের নগ্ন প্রকাশ।
ঘটনার খবর পেয়ে দ্রুত পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে এখনও পর্যন্ত কাউকে আটক করা হয়নি। পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, চৈতি বর্মন বড়ুয়ার অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে। যদিও এই ঘটনার নেপথ্যে যাঁর নাম উঠে এসেছে, সেই নতুন সভাপতি নিরঞ্জন সরকার এখনও পর্যন্ত কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি। তাঁর ঘনিষ্ঠ মহল অবশ্য দাবি করেছে, এই ঘটনায় নিরঞ্জনের কোনও ভূমিকা নেই।
রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, ব্লক কমিটি ঘোষণার পর তৃণমূলের অন্দরে গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব নতুন নয়। কিন্তু এ বার প্রাক্তন সভাপতির বাড়িতে সরাসরি হামলা হওয়ায় সংঘাত অন্য মাত্রা নিয়েছে। এতে ঘাসফুল শিবিরের ভাবমূর্তি বড়সড় ধাক্কা খাবে বলেই মনে করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই জেলা রাজনীতিতে ঝড় তুলেছে চৈতির বিস্ফোরক মন্তব্য এবং নিরঞ্জনের নীরবতা। তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করতে চাইছেন না।
স্থানীয় রাজনৈতিক মহলে জোর চর্চা চলছে যে, এই ঘটনার ফলে ঘাসফুল শিবিরে আরও অস্থিরতা তৈরি হবে। চৈতি বর্মন বড়ুয়ার অভিযোগ ও ক্ষোভের জেরে জেলা জুড়ে তৃণমূলের ভেতরের দান্দিক রাজনীতি প্রকট হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে, নিরঞ্জন সরকারের চুপ থাকা রাজনৈতিকভাবে চাপের ইঙ্গিত দিচ্ছে বলেই মনে করা হচ্ছে।
অভিযোগ-প্রতিঅভিযোগের এই ঘূর্ণিতে আপাতত সরগরম কোচবিহার। একদিকে চৈতির তীব্র ক্ষোভ, অন্যদিকে নিরঞ্জনের নীরবতা— সব মিলিয়ে ব্লকের অন্দরে যে তৃণমূলের অশান্তি আরও বেড়েছে, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। দলের ভাবমূর্তি কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তা নিয়েই এখন রাজনৈতিক মহলে তীব্র জল্পনা শুরু হয়েছে।













