এষণা কুন্ডু , নিউজ ডেস্ক ; যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে মেসি শো ঘিরে বিশৃঙ্খলা ও ভাঙচুরের ঘটনার তদন্তে বড়সড় পদক্ষেপ নিল বিধাননগর পুলিশ। বুধবার সকালে বিধাননগর দক্ষিণ থানার পুলিশের একটি বিশেষ দল হুগলির রিষড়া বাঙুর পার্ক এলাকায় অবস্থিত ইভেন্ট আয়োজন সংস্থার কর্তা শতদ্রু দত্তের বাড়িতে পৌঁছয়। মহিলা পুলিশকর্মী-সহ মোট পাঁচজন আধিকারিক রিষড়া থানার পুলিশের সহযোগিতায় ওই বিলাসবহুল বাড়িতে তল্লাশি চালান।
তিনতলা এই বাড়িতে সুইমিং পুল ও ব্যক্তিগত ফুটবল মাঠ রয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, তল্লাশির সময় বাড়িতে একমাত্র পরিচারিকা ছাড়া আর কেউ উপস্থিত ছিলেন না। তদন্তকারী আধিকারিকরা তাঁর সঙ্গে কথা বলেন এবং বাড়ির ঘরে ঘরে তল্লাশি চালান। যদিও প্রাথমিকভাবে কোনো নথি বা সামগ্রী সিজ করা হয়নি বলেই পুলিশ সূত্রে খবর।
বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় এক পুলিশ আধিকারিক জানান,
“তদন্ত সংক্রান্ত একাধিক বিষয় রয়েছে। এই মুহূর্তে বিস্তারিত কিছু বলা সম্ভব নয়।”
উল্লেখ্য, গত ১৩ ডিসেম্বর যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে মেসি শো চলাকালীন চরম বিশৃঙ্খলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। দর্শক নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা, নিরাপত্তার ঘাটতি এবং অব্যবস্থাপনার অভিযোগে বিধাননগর পুলিশ ইভেন্টের আয়োজন সংস্থার প্রধান হিসেবে শতদ্রু দত্তকে গ্রেফতার করে। পুলিশের দাবি, আয়োজক সংস্থা হিসেবে যুবভারতীর ভেতরে সৃষ্টি হওয়া বিশৃঙ্খলার দায় এড়ানো যায় না।
এই ঘটনায় রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক স্তরেও তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। রাজ্য সরকার ইতিমধ্যে কড়া পদক্ষেপ করেছে।
-
রাজ্য পুলিশের ডিজি-সহ একাধিক শীর্ষ পুলিশ আধিকারিককে শোকজ নোটিস দেওয়া হয়েছে।
-
একইসঙ্গে ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তদন্তে নতুন মোড় আসে যখন মেসি শো-তে কালো টাকা ব্যবহারের সম্ভাবনা সামনে আসে। বিধাননগর দক্ষিণ থানায় যুবভারতী কাণ্ডে পুলিশের পক্ষ থেকে দুটি পৃথক এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। সেই এফআইআর-এর ভিত্তিতে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) একটি ইসিআইআর (ECIR) নথিভুক্ত করে আর্থিক লেনদেনের উৎস খতিয়ে দেখার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে সূত্রের খবর।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, টিকিট বিক্রি, স্পনসরশিপ, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ও নিরাপত্তা খাতে বিপুল অঙ্কের অর্থ কোথা থেকে এসেছে এবং সেই অর্থের ব্যবহার কতটা বৈধ ছিল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রয়োজনে আয়োজক সংস্থার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, লেনদেনের নথি ও সংশ্লিষ্ট চুক্তিপত্র পরীক্ষা করা হবে।
বর্তমানে শতদ্রু দত্ত পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন এবং তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বুধবার সকালে প্রথমে বিধাননগর পুলিশের দলটি রিষড়া থানায় আসে, সেখান থেকেই বাঙুর পার্কে শতদ্রুর বাড়িতে যায় তদন্তকারী দল।
যুবভারতী কাণ্ডে নিরাপত্তা ব্যবস্থার ব্যর্থতা, প্রশাসনিক গাফিলতি ও সম্ভাব্য আর্থিক অনিয়ম—সব মিলিয়ে এই ঘটনা রাজ্যজুড়ে তীব্র চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। তদন্ত কোন দিকে এগোয় এবং আর কী কী তথ্য সামনে আসে, সেদিকেই এখন নজর রাজ্যবাসীর।














