এষণা কুন্ডু , পলিটিক্যাল ডেস্ক ;দক্ষিণ দিনাজপুরের কুমারগঞ্জ ব্লকের আত্রেয়ী ও ইছামতি নদী থেকে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে বালি ও মাটি তোলার অভিযোগকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক উত্তাপ ছড়াল এলাকায়। এই বেআইনি খননের বিরুদ্ধে সরব হয়ে ভারতীয় জনতা পার্টির কুমারগঞ্জ মণ্ডল শুক্রবার ব্লক ল্যান্ড অ্যান্ড ল্যান্ড রিফর্মস (BL&LRO) অফিসে লিখিত অভিযোগপত্র জমা দেয়। অভিযোগপত্রে সুনির্দিষ্ট একাধিক অনিয়মের কথা তুলে ধরে অবিলম্বে তদন্ত ও কঠোর পদক্ষেপের দাবি জানানো হয়েছে।
বিজেপির জেলা সভাপতি স্বরূপ চৌধুরী, জেলা সম্পাদক রজত ঘোষ-সহ কয়েকশো বিজেপি নেতা-কর্মী এদিন ডেপুটেশনে সামিল হন। দলীয় নেতৃত্বের অভিযোগ, কুমারগঞ্জ ব্লকের আত্রেয়ী ও ইছামতি নদীর বিভিন্ন অংশে সরকার অনুমোদিত প্রক্রিয়া ও নিয়মনীতি উপেক্ষা করে বিপুল পরিমাণে বালি তোলা হচ্ছে। শুধু নদীর বুক থেকেই নয়, চাষযোগ্য জমি থেকেও বেআইনিভাবে মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে বলে দাবি করা হয়েছে।
অভিযোগপত্রে বিজেপির তরফে বলা হয়েছে, এই অবৈধ খননের ফলে সরকারের বিপুল রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে। পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে। নদীর স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ ব্যাহত হলে ভবিষ্যতে ভয়াবহ নদীভাঙন, জলস্তর পরিবর্তন ও কৃষিজমির ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে বলে তারা সতর্ক করেছে।
বিজেপির অভিযোগ, মূলত রাতের অন্ধকারে ট্রাক্টর ও ট্রাকে করে অবৈধভাবে বালু ও মাটি পরিবহণ করা হচ্ছে। স্থানীয়দের দাবি, দিনের বেলায় তুলনামূলকভাবে কম হলেও রাত নামলেই এই বেআইনি কার্যকলাপ বেড়ে যায়। অথচ সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগপত্রে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তোলা হয়েছে বিজেপির তরফে। যেমন—
- এই খননের অনুমতি কে বা কারা দিয়েছে?
- সরকারকে কোনো ধরনের রয়ালটি বা রাজস্ব আদায় করা হচ্ছে কি না?
- কোন নিয়ম ও অনুমোদনের ভিত্তিতে নদীর বুকে খনন চলছে?
এই সমস্ত প্রশ্নের স্পষ্ট জবাব চেয়ে ব্লক প্রশাসনের কাছে বিস্তারিত তদন্তের দাবি জানিয়েছে বিজেপি। একই সঙ্গে অবিলম্বে অবৈধ খনন বন্ধ করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তোলা হয়েছে।
জানা গেছে, এই অভিযোগপত্রের অনুলিপি কুমারগঞ্জের বিডিও, কুমারগঞ্জ থানার আইসি এবং দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিকের কাছেও পাঠানো হয়েছে। বিজেপির দাবি, বিষয়টি শুধুমাত্র রাজনৈতিক নয়, বরং এলাকার পরিবেশ, কৃষি ও সাধারণ মানুষের ভবিষ্যতের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত।
ব্লক ল্যান্ড অ্যান্ড ল্যান্ড রিফর্মস অফিস সূত্রে জানা গেছে, বিজেপির জমা দেওয়া অভিযোগপত্র গ্রহণ করা হয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখার প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে বলে ইঙ্গিত মিলেছে, যদিও প্রশাসনের তরফে এখনও আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া মেলেনি।
ঘটনাকে কেন্দ্র করে কুমারগঞ্জ ও সংলগ্ন এলাকায় চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। স্থানীয়দের একাংশ বহুদিন ধরেই আত্রেয়ী ও ইছামতি নদীর ভাঙন ও পরিবেশগত বিপদের আশঙ্কা প্রকাশ করে আসছিলেন। তাঁদের মতে, লাগামছাড়া বালি ও মাটি তোলার ফলে নদীর চরিত্র বদলে যাচ্ছে, যা ভবিষ্যতে বড়সড় বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে।
এখন প্রশ্ন একটাই—এই অভিযোগের ভিত্তিতে প্রশাসন কতটা দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নেয়। অবৈধ খনন বন্ধ হবে কি না, দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না, সেদিকেই তাকিয়ে রয়েছে কুমারগঞ্জবাসী।















