এষণা কুন্ডু , পলিটিক্যাল ডেস্ক ; কলকাতা: বিশ্ব ফুটবলের মহাতারকা লিওনেল মেসিকে এক ঝলক দেখার উন্মাদনায় রবিবার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে তৈরি হল চরম বিশৃঙ্খলার ছবি। নির্ধারিত কর্মসূচি শেষ হওয়ার আগেই মাঠ ছাড়তে বাধ্য হলেন মেসি। দর্শক আসন থেকে মাঠের ভিতরে ছোড়া হল একের পর এক জলের বোতল। টিকিট কেটেও প্রিয় তারকাকে ঠিকভাবে দেখতে না পাওয়ার অভিযোগে ক্ষোভে ফেটে পড়েন হাজার হাজার ফুটবলপ্রেমী।এছাড়াও এই পরিস্থিতির খবর পেয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কনভয়ও স্টেডিয়ামে পৌছানোর আগেই মাঝপথ থেকে ফিরে যায় |
ক্ষুব্ধ দর্শক
প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, অনুষ্ঠান শুরু হতেই নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনার ঘাটতি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। মাঠে মেসি প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গেই নেতা-মন্ত্রী, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও বিভিন্ন তারকারা তাঁকে ঘিরে ধরেন। ফলে গ্যালারি থেকে সাধারণ দর্শকদের পক্ষে তাঁকে দেখার কার্যত কোনও সুযোগই ছিল না। অভিযোগ, মাঠে ঢোকার সময় দর্শকদের সঙ্গে জল পর্যন্ত নিয়ে যেতে দেওয়া হয়নি, অথচ ভিতরে ২০ টাকার জলের বোতল ২০০ টাকায় বিক্রি করা হয়েছে।
দীর্ঘ অপেক্ষার পরও মেসিকে সরাসরি দেখতে না পেয়ে দর্শকদের একাংশ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। সেই ক্ষোভ থেকেই মাঠের ভিতরে জলের বোতল ছোড়া হয় বলে অভিযোগ। মাঠের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে অসংখ্য খালি বোতল। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশকে হস্তক্ষেপ করতে হয়। শেষ পর্যন্ত নিরাপত্তার স্বার্থে মেসিকে নির্ধারিত সময়ের আগেই অনুষ্ঠানস্থল ছাড়তে হয়। এছাড়াও তারা অভিযোগ করেছে তাদের সাথে প্রতারণা করা হয়েছে |
কোন কোন দর্শক ক্ষুব্ধ হয়ে বলেছেন “আমরা মেসিকে দেখতে এসেছিলাম কিন্তু দেখতে পেয়েছি মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসকে” |
এই বিশৃঙ্খলার মধ্যেই নির্ধারিত সময়ের আগেই অনুষ্ঠানস্থল ছাড়েন লিওনেল মেসি। নিরাপত্তার স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা যায়। একই সঙ্গে জানা যায়, যুবভারতীতে যাওয়ার পথে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কনভয়ও মাঝপথ থেকে ফিরে যায়। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠায় তিনি মাঠে পৌঁছননি বলেই প্রশাসনিক সূত্রের দাবি। এই ঘটনা ঘিরে নতুন করে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
ঘটনার পর পুলিশ স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, যুবভারতীতে যে বিশৃঙ্খলা হয়েছে তা বরদাস্ত করা হবে না। পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে, “যে টিকিট বিক্রি হয়েছিল, তার টাকা দর্শকদের ফেরত দিতে হবে আয়োজকদের। এই ঘটনায় কাউকে ছাড়া হবে না।” পুরো ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে বলেও জানানো হয়।
বিরোধী দলনেতার শুভেন্দু অধিকারির ক্ষোভ প্রকাশ
এই ঘটনা ঘিরে রাজনৈতিক চাপানউতোর তীব্র হয়েছে। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সোশ্যাল মিডিয়ায় কটাক্ষ করে লেখেন, ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস ও মন্ত্রী সুজিত বসুর ‘ব্যবসা’র ফলেই দর্শকদের এমন দুরবস্থা হয়েছে। তাঁর অভিযোগ, হাজার হাজার টাকা দিয়ে টিকিট কেটে যাঁরা গিয়েছিলেন, তাঁদের ভাগ্যে জুটেছে মাত্র ৫–৭ মিনিট জায়ান্ট স্ক্রিনে মেসিকে দেখার সুযোগ। তিনি আরও দাবি করেন, গোটা আয়োজনটাই সাধারণ ফুটবলপ্রেমীদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা।
শুভেন্দু অধিকারীর দাবিগুলির মধ্যে রয়েছে—
১) গ্যালারির সমস্ত দর্শকদের টিকিটের পুরো টাকা ফেরত দিতে হবে।
২) এই বিশৃঙ্খলা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির দায়ে ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, মন্ত্রী সুজিত বসু এবং প্রধান আয়োজক শতদ্রু দত্তকে গ্রেফতার করতে হবে।
৩) রাজ্যের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হওয়ার দায়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পদত্যাগ করতে হবে।
সুকান্ত মজুমদারের অভিযোগ
বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও একই সুরে রাজ্য সরকারকে আক্রমণ করেছেন। তিনি বলেন, “ব্যর্থ মুখ্যমন্ত্রীর রাজত্ব মানেই চূড়ান্ত নৈরাজ্য ও অব্যবস্থা। যুবভারতীতে হাজার হাজার ক্রীড়াপ্রেমী টিকিট কেটে এসেও মেসিকে দেখতে পেলেন না। প্রশাসনিক পরিকল্পনার অভাব এতটাই চরমে পৌঁছেছে যে, বিশ্বতারকাকে পর্যন্ত ফিরে যেতে বাধ্য হতে হয়েছে।” তাঁর মতে, পুলিশ-প্রশাসনের এই ব্যর্থতার সম্পূর্ণ দায় মুখ্যমন্ত্রীর।
এছাড়াও তিনি অভিযোগ করেছেন মাঠে যারা বোতল ছুড়েছেন , ভাংচুর করেছেন সবাই অরূপ বিশ্বাস এবং তৃনমূল কংগ্রেসের লোক |
অন্যদিকে, আয়োজকদের তরফে এখনও পর্যন্ত বিস্তারিত কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে সূত্রের খবর, দর্শকদের অভিযোগ ও পুলিশের নির্দেশ মেনে টিকিট ফেরতের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। একই সঙ্গে নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনায় কোথায় গলদ ছিল, তা নিয়েও অভ্যন্তরীণ পর্যালোচনা শুরু হয়েছে।
যুবভারতীর মতো আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়ামে এমন বিশৃঙ্খলা রাজ্যের ক্রীড়া পরিকাঠামো ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। ফুটবলপ্রেমীদের একাংশের বক্তব্য, বিশ্ব ফুটবলের অন্যতম সেরা তারকাকে ঘিরে এমন অব্যবস্থা শুধু দর্শকদের নয়, গোটা রাজ্যকেই লজ্জায় ফেলেছে। এখন নজর পুলিশের তদন্ত, টিকিট ফেরতের বাস্তবায়ন এবং এই ঘটনার দায় ঠিক কার ঘাড়ে পড়ে, তার দিকেই।















