এষণা কুন্ডু , নিউজ ডেস্ক ; আধুনিকতার মোড়কে নেশার দৌরাত্ম্য—দক্ষিণ দিনাজপুরের বুনিয়াদপুর ও গঙ্গারামপুর এলাকায় দিনে-দুপুরে, প্রকাশ্য রাস্তায় আইনকে কার্যত বুড়ো আঙুল দেখিয়ে রমরমিয়ে চলছে অবৈধ মদের ব্যবসা। ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা হোটেল ও ছোট দোকানগুলিতে কোনও বৈধ লাইসেন্স ছাড়াই দেদার বিক্রি হচ্ছে দেশি ও বিদেশি মদ। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের নাকের ডগাতেই এই বেআইনি কারবার চললেও কার্যকর পদক্ষেপের অভাব চোখে পড়ছে।
সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, এইসব অবৈধ মদের দোকান চালাতে নিয়মিত ‘মাসিক’ দিতে হয়। থানার কিছু অসাধু কর্মী ও আবগারি দপ্তরের নির্দিষ্ট মহলের সঙ্গে যোগসাজশ করেই নাকি চলে এই ব্যবসা। এমনকী অভিযোগ উঠেছে, পুলিশ কর্মীদের ‘খুশি’ রাখতে মাঝেমধ্যেই নামিদামি বিদেশি মদের আয়োজন করা হয়। ফলে লোক দেখানো অভিযানে মাঝে মধ্যে মদ আটক হলেও, অজানা কারণে দ্রুত ছাড়া পেয়ে যায় মদ ব্যবসায়ীরা। এরপর আবার বুক চিতিয়ে আগের মতোই শুরু হয় বিক্রি।
এইসব দোকান ও হোটেলগুলিতে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ভিড় লেগেই থাকে। ১০ টাকার খরিদ্দার থেকে শুরু করে ১০০০ টাকা কিংবা তারও বেশি দামের মদ কেনার লোকজন নিয়মিত আসেন। সন্ধ্যা নামলেই অল্পবয়সি যুবক থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সের মানুষ ভিড় জমায়। অনেক দোকানে ‘কেবিন’ ব্যবস্থাও রয়েছে, যেখানে নির্বিঘ্নে মদ্যপান চলে। স্থানীয়দের দাবি, এইসব মদের আসর ঘিরে মাঝেমধ্যেই অশান্তি, ঝামেলা ও মারামারির ঘটনাও ঘটে।
বাসিন্দাদের বক্তব্য, অবৈধ মদের দৌরাত্ম্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে যুব সমাজ। নেশার টানে তাদের ভবিষ্যৎ ক্রমশ তলানিতে ঠেকছে। পরিবার ভাঙছে, সমাজে অপরাধ বাড়ছে—সব মিলিয়ে পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। স্থানীয় এক প্রবীণ বাসিন্দা বলেন, “২০১৫ সালে কালীপুজোর রাতে বুনিয়াদপুরে মদের আসর ঘিরে এক যুবক খুন হয়েছিল। এত বড় ঘটনার পরও প্রশাসনের হুঁশ ফেরেনি। বরং অবৈধ মদের কারবার আরও বেড়েছে।”
অভিযোগ উঠেছে, প্রশাসন সবকিছু জেনেও নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। দিনের পর দিন অবৈধ মদের ঠেক বাড়তে থাকলেও স্থায়ীভাবে বন্ধ করার কোনও উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। ফলে সকাল থেকেই এইসব মদের আড্ডা যুব সমাজকে আকর্ষণ করছে, যা সমাজের পক্ষে ভয়াবহ সংকেত বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
এলাকাবাসীর একটাই দাবি—অতিসত্বর প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। অবৈধ মদের দোকান ও হোটেলগুলি স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে হবে, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। নচেৎ নেশার এই ভয়াল থাবা আরও গভীরে ঢুকে সমাজ ও যুব প্রজন্মের ভবিষ্যৎ অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেবে বলেই আশঙ্কা স্থানীয়দের।















