এষণা কুন্ডু , নিউজ ডেস্ক ; ১০ ডিসেম্বর, হরিপাল: মানবাধিকার দিবসের দিনেই হরিপাল শ্রমজীবী হাসপাতালের হাতে তুলে দেওয়া হল একটি নতুন এসি অ্যাম্বুলেন্স। বিধায়ক ডা. করবী মান্নার এলাকা উন্নয়ন তহবিল (এল.এ.ডি.) থেকে কেনা এই অ্যাম্বুলেন্স পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্বে ছিলেন হরিপাল বিডিও পারমিতা ঘোষ। প্রত্যন্ত এলাকা থেকে জরুরি চিকিৎসা পরিষেবায় দ্রুত রোগী পরিবহণে এই অ্যাম্বুলেন্স গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে বলে মত হাসপাতাল পরিচালন সমিতির।
গণউদ্যোগে হাসপাতালের পথচলা
২০২১ সালের নভেম্বর মাসে পাঁচগাছিয়া গ্রামে বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের দান করা জমির উপর গণউদ্যোগে গড়ে ওঠে হরিপাল শ্রমজীবী হাসপাতাল। শুরুতে শুধুমাত্র বহির্বিভাগ চালু থাকলেও ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে পরিষেবা ও সুযোগ-সুবিধা।
২০২৩ সালে তিনতলা ভবন তৈরি হওয়ার পর শুরু হয় অন্তর্বিভাগ। সেই বছরই হাসপাতাল চালু করে শল্য চিকিৎসা বিভাগ। ২০২৪ সালে চালু হয় ল্যাপারোস্কোপিক অস্ত্রোপচার এবং স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের মাধ্যমে চিকিৎসা পরিষেবা—যার ফলে প্রতিদিন বহু কৃষিজীবী, শ্রমজীবী ও আর্থিকভাবে পিছিয়ে থাকা মানুষের উপকার হয়েছে।
২০২৫ সালে শুরু হয় অর্থোপেডিক বা হাড়–অস্থি বিভাগের অস্ত্রোপচার পরিষেবা। বর্তমানে আইসিইউ-সহ মোট তিরিশ শয্যার এই হাসপাতালটি নিজস্ব চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণভাবে ২৪ ঘণ্টাই পরিষেবা দিয়ে চলেছে।
প্রতিশ্রুতি পূরণ করল প্রশাসন
গত জানুয়ারি মাসে সংগঠনের প্রতিষ্ঠাদিবস অনুষ্ঠানে বিধায়ক ডা. করবী মান্না প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, হাসপাতালের জন্য একটি আধুনিক এসি অ্যাম্বুলেন্স প্রদান করবেন। সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ করতেই মানবাধিকার দিবসে বিশেষ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে হরিপাল শ্রমজীবী হাসপাতালের হাতে তুলে দেওয়া হল সেই অ্যাম্বুলেন্স।
ছোটখাটো হলেও আন্তরিক পরিবেশে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী বেচারাম মান্না, হরিপাল সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক পারমিতা ঘোষ এবং স্থানীয় বিশিষ্টজনেরা।
রাস্তা সংস্কারের প্রতিশ্রুতি
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মন্ত্রী বেচারাম মান্না আশ্বাস দেন যে, হাসপাতাল থেকে শাহমনিতলা হয়ে অহল্যা বাই রোডের মুখ পর্যন্ত রাস্তা প্রশস্তকরণ ও সংস্কারের কাজ দ্রুতই শুরু হবে। এতে জরুরি পরিষেবা পৌঁছনো আরও দ্রুত ও সহজ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের প্রতিক্রিয়া
অ্যাম্বুলেন্স পেয়ে খুশি হাসপাতালের সম্পাদক সন্দীপন চ্যাটার্জি। তাঁর কথায়,
“হরিপাল শ্রমজীবী হাসপাতাল কয়েক ধাপ এগিয়ে গেল। রাত-বিরেতে রোগী পরিবহণে এই অ্যাম্বুলেন্স বিশেষভাবে সহায়ক হবে।”
বেলুড় শ্রমজীবী স্বাস্থ্য প্রকল্প সমিতির সহসভাপতি ও হাসপাতালের মুখ্য উপদেষ্টা ফণী গোপাল ভট্টাচার্য বলেন,
“জনগণের উদ্যোগে তৈরি এই হাসপাতালের উন্নয়নে বিধায়ক ডা. করবী মান্নার অবদান অসামান্য। প্রকৃত খরচে অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা দেওয়া হবে, যার ফলে সাধারণ মানুষ আরও বেশি উপকৃত হবেন।”
সহসম্পাদক গৌতম সরকার জানান,
“এই হাসপাতাল গণউদ্যোগের এক উজ্জ্বল উদাহরণ। আমার বিশ্বাস ভবিষ্যতে এটি জেলা ও রাজ্যের অন্যতম সেরা হাসপাতাল হয়ে উঠবে। তবে নিজের অ্যাম্বুলেন্স না থাকায় পরিষেবা দিতে অসুবিধা হচ্ছিল। এখন সেই সমস্যা দূর হল।”
স্বাস্থ্য পরিষেবায় নতুন মাত্রা
নতুন অ্যাম্বুলেন্স চালু হওয়ায় শুধু হাসপাতালই নয়, হরিপাল-সহ আশপাশের বিস্তীর্ণ গ্রামাঞ্চলের মানুষও উপকৃত হবেন। জরুরি সময়ে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে আনা ও অন্যত্র রেফার করার ক্ষেত্রে এটি সময় বাঁচাবে, প্রাণ বাঁচাবে।
গণউদ্যোগে নির্মিত হাসপাতালকে আরও স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার পথে এগিয়ে নিয়ে গেল এই পদক্ষেপ—এমনটাই মত স্থানীয় মানুষ ও স্বাস্থ্যকর্মীদের|
















