দেশজুড়ে বাড়তে থাকা বিভাজনের রাজনীতির বিরুদ্ধে সরব পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেস। বহুত্ববাদ, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এবং সাংবিধানিক মূল্যবোধ রক্ষার স্বার্থে দল ঘোষণা করল নতুন আন্দোলনমূলক কর্মসূচি— ‘সহস্রকণ্ঠে সংবিধান পাঠ’। শুক্রবার প্রকাশিত এক প্রেস বিবৃতিতে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার জানিয়ে দেন, আগামী ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, দুপুর ১টা, মধ্য কলকাতার রানী রাসমণি রোডে এই কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে।
বহুত্ববাদ রক্ষায় ‘বন্দেমাতরম’-এ শুরু, সংবিধান পাঠে শপথ
প্রদেশ কংগ্রেসের দাবি, বর্তমান রাজনৈতিক আবহে ভাষা, পোশাক, খাদ্যাভ্যাস ও ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজনের রাজনীতি ভয়াবহ আকার নিয়েছে। দল মনে করে, এই পরিস্থিতি সংবিধানের চেতনাকে আঘাত করছে।
প্রেস বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দেশজুড়ে রাষ্ট্রীয় মদতে ভারতীয় সংবিধানের মূল আদর্শ— সমতা, স্বাধীনতা, ভ্রাতৃত্ব— ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মনুবাদী দর্শন ও সংকীর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সামনে রেখে আরএসএস ও শাসক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে কংগ্রেস বলেছে— বহু মহান মনীষীর মূল্যবোধ ও মানবতার দর্শনকে ‘অপমান’ করা হচ্ছে।
প্রদেশ কংগ্রেসের বক্তব্য, “গীতা পাঠের বদলে চণ্ডীপাঠ, রাম মন্দিরের বদলে জগন্নাথ মন্দিরকে রাজনৈতিক অস্ত্র করে তোলা হচ্ছে। এই সংকীর্ণতার রাজনীতির আমরা তীব্র বিরোধিতা করি।”
তাঁরা মনে করিয়ে দিয়েছে— চৈতন্যদেব, রাজা রামমোহন রায়, বিদ্যাসাগর, ডিরোজিও, স্বামী বিবেকানন্দ, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল ও শ্রী রামকৃষ্ণের বাংলায় ‘যত মত, তত পথ’-এর মর্মবাণীই বাঙালির সভ্যতা ও সংস্কৃতির ভিত্তি। সেই বহুত্ববাদ আজ ‘পদদলিত’— দাবি দলের শীর্ষস্তরের।
এই কারণেই ২০ ডিসেম্বরের কর্মসূচির লক্ষ্য— সাধারণ মানুষের সঙ্গে কংগ্রেস নেতা-কর্মীদের সম্মিলিতভাবে সংবিধান পাঠ ও সংবিধান রক্ষার শপথ গ্রহণ। অনুষ্ঠানের শুরু হবে বন্দেমাতরম গেয়ে।
১০০ দিনের কাজের দাবিতে রাজভবন ঘেরাও: দ্বিতীয় কর্মসূচি
সংবিধান পাঠের কর্মসূচির পাশাপাশি প্রদেশ কংগ্রেস ঘোষণা করেছে আরও এক গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলন— রাজভবন ঘেরাও।
২২ থেকে ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫— এই তিন দিনের মধ্যে বাংলার জন্য ‘১০০ দিনের কাজ’ পুনরায় চালুর দাবিতে এই ঘেরাও কর্মসূচি আয়োজন করা হবে। সুনির্দিষ্ট দিন ও সময় প্রদেশ কংগ্রেস শীঘ্রই জানাবে।
প্রেস বিবৃতিতে প্রদেশ কংগ্রেস অভিযোগ করেছে— দীর্ঘদিন নতুন জব কার্ড ইস্যু বন্ধ রয়েছে বাংলায়। গ্রামীণ দরিদ্র পরিবারের জীবিকা প্রকল্প ‘১০০ দিনের কাজ’ রাজনৈতিক কারণে আটকে রাখা হয়েছে বলে দাবি তাঁর।
তিনি বলেন, “১০০ দিনের কাজ বাংলার মা-ভাই-বোনদের অধিকার। জাতীয় কংগ্রেসের আনা এই প্রকল্পকে রাজনৈতিক শত্রুতা দেখিয়ে আটকে রাখা অনৈতিক ও অমানবিক। আমরা এই অত্যাচারের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামব।”
কংগ্রেসের অভিযোগ, কেন্দ্র-রাজ্যের টানাপোড়েনে সাধারণ মানুষের কাজ বন্ধ হয়ে আছে। এই পরিস্থিতিতে রাজভবন ঘেরাওয়ের মধ্য দিয়ে রাজ্য কংগ্রেস দাবি তুলবে— প্রকল্পের বরাদ্দ অবিলম্বে চালু করতে হবে, এবং নতুন জব কার্ড ইস্যুর উপর নিষেধাজ্ঞা তুলতে হবে।
‘সংবিধান রক্ষা আমাদের ঐতিহাসিক দায়’
প্রদেশ কংগ্রেস জানাচ্ছে, আজকের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সাংবিধানিক মূল্যবোধই সবচেয়ে বড় অস্ত্র।
“যে বাংলায় মানবতা, সহনশীলতা ও স্বাধীনতার বার্তা যুগে যুগে মনীষীরা দিয়ে গেছেন, সেখানে বিভেদমূলক রাজনীতি বরদাস্ত করা হবে না,”— বিবৃতিতে জোর দিয়ে বলা হয়েছে।
এছাড়া দল মনে করে— সংবিধান পাঠের মতো প্রতীকী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়বে। বিভাজনের রাজনীতির বিরুদ্ধে ঐক্যের বার্তা যাবে সমাজের প্রতিটি স্তরে।
দু’টি কর্মসূচিতেই বৃহৎ জনসমাগমের লক্ষ্যে কংগ্রেস
দলীয় সূত্রের দাবি, ২০ ডিসেম্বরের কর্মসূচিতে কলকাতা ছাড়াও জেলা থেকে বহু নেতা-কর্মী উপস্থিত থাকবেন। সংবিধান পাঠের পর নাগরিকদের সঙ্গে কংগ্রেস নেতা-কর্মীরা মিছিল করবেন বলেও জানা গেছে।
একইভাবে ২২–২৪ ডিসেম্বরের মধ্যে রাজভবন ঘেরাওয়ে বড় সংখ্যক অংশগ্রহণের পরিকল্পনা রয়েছে সংগঠনের।
প্রদেশ সভাপতির আহ্বান
প্রেস বিবৃতির শেষে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার বলেছেন—
“সংবিধান রক্ষা, সাংবিধানিক মূল্যবোধ সংরক্ষণ এবং বাংলার মানুষের কাজের অধিকার ফিরিয়ে আনা— এই দুই লড়াইয়ে আমরা রাজপথে নামছি। সকল মানুষকে এই আন্দোলনে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।”
















