এষণা কুন্ডু, পলিটিক্যাল ডেস্ক ; রাজ্যে যতদিন তৃণমূলের সরকার থাকবে ততদিন মাথায় চুল রাখবেন না— ঠিক এই শপথ নিয়েই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছিলেন আইনজীবী তথা বিজেপি নেতা কৌস্তভ বাগচি। রাজনৈতিক প্রতিবাদের তীব্রতার মধ্যে মাথা মুন্ডন করে নজর কেড়েছিলেন রাজ্য রাজনীতিতে। সেই কৌস্তভ বাগচিই এবার জীবনের এক নতুন অধ্যায়ে পা রাখলেন। বুধবার সন্ধ্যায় শ্রীরামপুরের মরাদান অঞ্চল সাক্ষী থাকল তাঁর আনুষ্ঠানিক বিয়ের।
কৌস্তভ বাগচির সঙ্গে দীর্ঘদিনের সঙ্গী প্রীতি করের শুভ পরিণয় সম্পন্ন হল বিয়ের সকল আচার অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে। কৌস্তভের মতো প্রীতিও পেশায় একজন আইনজীবী— কলকাতা হাইকোর্টে কর্মরত। দু’জনের বন্ধুত্ব, সম্পর্ক, তারপর প্রেম— সব মিলিয়ে দীর্ঘ দিনের যাত্রাপথের শেষে বাঁধা পড়লেন গাঁটছড়ায়।
যদিও বছর খানেক আগেই আইনি বিয়ের রীতি সম্পন্ন হয়েছিল। কিন্তু পরিবারের সকলকে সঙ্গে নিয়ে, আত্মীয়স্বজন ও ঘনিষ্ঠ মহলের উপস্থিতিতে বৃহত্তর আয়োজনে বিয়ের পিঁড়িতে বসার অপেক্ষায় ছিলেন দুজনেই। অবশেষে সেই বহু প্রতীক্ষার দিন এসে গেল বুধবার।
বিয়ের সাজে কৌস্তভকে দেখা গেল ঐতিহ্যবাহী ধুতি-পাঞ্জাবিতে, গলায় মালা, মাথায় টোপর— পুরোপুরি বাঙালি আচার মেনে। প্রীতি করও পরেছিলেন লাল বেনারসি, শাঁখা–পলা–নোয়ার সাজে ছিলেন যেন ঐতিহ্য আর সৌন্দর্যের মেলবন্ধন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিরা জানান, কৌস্তভ ছিলেন অত্যন্ত ফুরফুরে, হাসিখুশি এবং প্রাণবন্ত মেজাজে। রাজনৈতিক উত্তাপ বা আদালত–সভায় তীব্র যুক্তিতর্কে অভ্যস্ত মানুষটিকে যেন নতুন করে পেলেন সকলেই — একজন প্রেমিক, একজন স্বামী এবং একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে।
বিয়ের মধ্যেই রাজনীতি প্রসঙ্গ
সংবাদমাধ্যমকে কৌস্তভ জানান, প্রীতির সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক বহু বছরের। তিনি বলেন, “২০২২ সালে যখন রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে মাথা মুন্ডন করেছিলাম, তখনও প্রীতি আমার পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। কঠিন সময়, দুঃসময়, চাপ— কোনও কিছুতেই ও আমাকে একটিবারও আলাদা হতে দেয়নি।”
রাজনীতির পরিসর ছাড়াও ব্যক্তিগত সম্পর্কের এই দৃঢ়তা দুজনের জুটিকে আরও পরিণত করেছে। কৌস্তভের কথায়, প্রীতি কোনও রাজনৈতিক দলে যুক্ত নন। কিন্তু “বরাবরই তৃণমূল বিরোধী মনোভাবাপন্ন”— এমনটাই জানিয়েছেন বিজেপি নেতা। তিনি আরও বলেন, ব্যক্তিগত জীবন আর রাজনৈতিক লড়াই— দুটোকেই আলাদা করে দেখেন দু’জনে।
বেড়াতে নয়, ফের যুদ্ধক্ষেত্রে — বিয়ের পরই রাজনৈতিক ময়দানে ফেরা
বিয়ের জন্য দলের কাছে ৫–৬ দিনের ছুটি নিয়েছেন কৌস্তভ বাগচি। তবে দীর্ঘ অবসর বা নবদম্পতির ছুটির কোনও পরিকল্পনা আপাতত নেই। কৌস্তভের ভাষায়,
“এখনই আরাম করার সময় নয়। সামনে ২০২৬। বিজেপিকে ক্ষমতায় আনতে না পারলে লড়াইয়ের মানে কী?”
তিনি জানান, দ্রুতই দলীয় কর্মসূচিতে ঝাঁপিয়ে পড়বেন। বিজেপির সংগঠন, সভা, কর্মশালা— সব জায়গায় সক্রিয় হয়ে কাজ করার জন্যই এই স্বল্প বিরতি।
শপথ ও প্রতীক — প্রতিবাদ থেকে প্রেমের পথচলা
কৌস্তভ বাগচির মাথা মুন্ডন করে প্রতিবাদ জানানোর ঘটনা সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন তুলেছিল। অনেকে সমালোচনা করেছিলেন, অনেকে প্রশংসাও করেছিলেন। রাজনৈতিক শপথ যেখানে মাথা মুন্ডন হয়েছিল, আজ সেই মাথাতেই ফের শঙ্খের শব্দ, উলুধ্বনি, সানাই— সময় বদলের প্রতীক যেন।
একদিকে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান, অন্যদিকে জীবনের কোমল অধ্যায়— দুই বিপরীত স্রোত মিলেমিশে দ্বিতীয় দফা আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
বিয়ের আনন্দের মাঝেই বার্তা — লড়াই চলবে
বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ হলেও সাংগঠনিক ব্যস্ততা থেকে খুব বেশি দূরে থাকা হবে না বিজেপি নেতার। অনুষ্ঠানের শেষে তিনি ফের মনে করিয়ে দিয়েছেন —
“২০২৬ সালে পশ্চিমবঙ্গে পরিবর্তন আসবেই।”
নবদম্পতির জন্য যেমন ছিল ভালোবাসার উৎসব, দর্শক ও রাজনৈতিক মহলের কাছে তেমনই ছিল প্রতীকী বার্তার দিন।
ভালোবাসা, প্রতিবাদ, পেশা ও নীতি— চারধারেই দাঁড়িয়ে কৌস্তভ বাগচির নতুন জীবন শুরু। এখন দেখার, সংসার ও রাজনীতির সমান্তরাল রাস্তায় কতটা সুচারুভাবে এগিয়ে যান এই দম্পতি।















