এষণা কুন্ডু , পলিটিক্যাল ডেস্ক ; তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশের পরেই জেলার বিভিন্ন বিধানসভায় শুরু হয়েছে এসআইআর (SIR)–এর কাজ পর্যালোচনা। কোন কোন এলাকায় পারফরম্যান্স ভালো, কোথায় দুর্বলতা— সবটাই দলীয় নেতৃত্বের তরফে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, যেসব বিধানসভার পারফরম্যান্স খারাপ তাদের প্রতিনিধিদের এলাকায় সময় দেওয়া, ওয়ার রুমে উপস্থিত থেকে এসআইআর-এর সার্বিক কাজ পর্যবেক্ষণ এবং বিএলএ–দের সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ বজায় রাখার নির্দেশও পৌঁছে গেছে।
এই প্রেক্ষাপটেই বলাগড় বিধানসভায় দেখা গেল ভিন্ন ছবি। গতকাল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভার্চুয়াল বৈঠকে বলাগড়ের বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারী অংশ নিলেও আজ তাকে এলাকায় দেখা যায়নি। যদিও প্রাক্তন বিধায়ক অসীম মাজিকে সক্রিয়ভাবে ওয়ার রুমে বসে কাজ পরিচালনা করতে দেখা গেছে। ফলে বলাগড়ের তৃণমূল শিবিরে শুরু হয়েছে কানাঘুষো, আর সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রশ্ন— বর্তমান বিধায়ক অনুপস্থিত থাকায় কি এসআইআর-এর কাজে প্রভাব পড়বে?
বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারীর অনুপস্থিতি নিয়ে অনেকের মধ্যেই সংশয় তৈরি হওয়ায় তার পিএ রাজা ঘোষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, “বিধায়কের শরীর খারাপ। তাই আজ তিনি আসতে পারেননি।” তবে রাজনৈতিক মহলের একাংশ বলছেন, গুরুত্বপূর্ণ সময়েও ওয়ার রুমে উপস্থিত না থাকার বিষয়টি ইতিবাচক বার্তা দিচ্ছে না।
অন্যদিকে প্রাক্তন বিধায়ক অসীম মাজি আজ সকাল থেকেই ওয়ার রুমে বসে দলের সঙ্গে বিভিন্ন ভাগে কাজ করছেন। বিএলএ–দের সঙ্গে যোগাযোগের পাশাপাশি বিভিন্ন বুথের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখছেন। তার কথায় দলের প্রতি দায়বদ্ধতার জায়গাটি অন্যরকম।
অসীম মাজি বলেন—
“দলের প্রতি দায়বদ্ধতা একটা আলাদা জিনিস। এটি অত্যন্ত জরুরি কাজ। এসআইআর–এ মৃত্যু মিছিল চলছে, সেই ভুলভ্রান্তি ঠেকানোর চেষ্টা করছে তৃণমূল। এত কম সময়ে অপরিকল্পিতভাবে কাজ হওয়ায় ভুলের সম্ভাবনা বাড়ছে। তাই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন দলের প্রত্যেক প্রতিনিধি ও কর্মীদের নিখুঁতভাবে কাজ করার জন্য। কেউ যদি দায়িত্ব না নেয়, সে নিয়ে বলার কিছু নেই। দল যে দায়িত্ব দিয়েছে আমরা তা পালন করছি। বর্তমান বিধায়কের বিষয়ে বলার ক্ষমতা নেই— নিজের দায়িত্বই পালন করছি।”
বলাগড়ের সাধারণ মানুষেরও একাংশ ক্ষোভ ঝেড়েছেন।
তাদের অভিযোগ— “বিধায়ককে এলাকায় পাওয়া যায় না। ফলে অনেক সমস্যা হলে সমাধান পাওয়া যায় না। এখন আবার ওয়ার রুমেও নেই— এতে পরিস্থিতি আরও জটিল হবে।”
অন্যদিকে গতকালই ভিসি সভার পরে বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারী বলেছিলেন—
“নেতা নির্দেশ দিয়েছেন বিধায়ককে বিএলএ–দের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে। আমি চেষ্টা করছি। প্রতিদিন ত্রিশ জনের মতো বিএলএ–র সঙ্গে ফোনে কথা বলছি এবং দলের টিম ঘুরছে। একটি বৈধ ভোটারের নামও বাদ যাবে না। বাদ গেলে আন্দোলন হবে।”
তবে আজ ওয়ার রুমে অনুপস্থিতি সেই বক্তব্যের সঙ্গে কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ— তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। বিশেষ করে যখন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় পরিষ্কার বলেছেন, এলাকার প্রতিনিধি ও দায়িত্বশীলদের ক্ষেত্রেই মাঠে থাকা সবচেয়ে জরুরি।
বর্তমানে বলাগড় তৃণমূল শিবিরের ভেতরে সূক্ষ্ম অস্বস্তি তৈরি হলেও নেতৃত্বের নির্দেশ মেনে কর্মীরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এখন দেখার বিষয়— আগামী দিনে বর্তমান বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারীর সক্রিয় উপস্থিতি বাড়ে কিনা, নাকি প্রাক্তন বিধায়কের হাত ধরে ওয়ার রুমের নেতৃত্বই আরও দৃঢ় হয়।















