শীত নামতেই নলেন গুড়ের সুবাসে মাতোয়ারা দক্ষিণ দিনাজপুর

২৫শে নভেম্বর,এষণা কুন্ডু,নিউজ ডেস্ক : শীতের হাওয়া বইতে শুরু হলেই বাঙালির খাদ্যতালিকায় এক আলাদা উত্তেজনা দেখা দেয়|ঋতু বদল বাঙালির জীবনে.....

South Dinajpur, intoxicated by the aroma of jaggery, is a delight as winter sets in.
South Dinajpur, intoxicated by the aroma of jaggery, is a delight as winter sets in.

২৫শে নভেম্বর,এষণা কুন্ডু,নিউজ ডেস্ক  : শীতের হাওয়া বইতে শুরু হলেই বাঙালির খাদ্যতালিকায় এক আলাদা উত্তেজনা দেখা দেয়|ঋতু বদল বাঙালির জীবনে যেমন সৌন্দর্য আনে, তেমনই আনে খাবারের বাহার। আষাঢ়ের প্রথম বৃষ্টিতে যেমন বাঙালি ছুটে যায় ইলিশের বাজারে, ঠিক তেমনই কার্তিক-অগ্রহায়ণের শেষে শীত পড়তেই খোঁজ শুরু হয় খেজুর রস আর সেই রসের অতুলনীয় সৃষ্টি—নলেন গুড়।

প্রায় নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকেই দক্ষিণ দিনাজপুর জুড়ে অনুভূত হতে শুরু করেছে শীতের কামড়। ভোরের কুয়াশা, দুপুরের মেঘলা আকাশ আর সন্ধ্যার ঠান্ডা হাওয়া মিলিয়ে হাড়-কাঁপানো শীত যেন আস্তে আস্তে নিজের রাজত্ব কায়েম করছে। এই সময়ই জেলার বিভিন্ন গ্রামে শুরু হয়েছে পিঠে-পুলি তৈরির তোড়জোড়। আর পিঠে-পুলি মানেই চাই নলেন গুড়—বাঙালির শীতের আবেগের অন্যতম নির্যাস।

হরিরামপুর ব্লকের বরভিটা গ্রামের সুরেশ সরকার সেই আবেগকে ধরে রেখেছেন বেশ কয়েক দশক। বয়স পঞ্চাশ পার করলেও এখনও সমান উৎসাহে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে নলেন গুড় তৈরি করেন তিনি। ছোটবেলা থেকেই বাবার হাত ধরে এই পেশায় আসা সুরেশবাবু গত ৮ বছর ধরে নিয়মিতভাবে এই কাজে যুক্ত।

তিনি জানান, প্রতিবছরই ১৪ থেকে ১৫টি খেজুর গাছ কিনে নেন। রস সংগ্রহ করার পর গাছগুলোকে সাতদিন বিশ্রামে রাখতে হয়—স্থানীয় ভাষায় একে বলা হয় ‘শুকি’। এই শুকি দেওয়ার প্রয়োজনীয়তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, “শুকি না দিলে রসের স্বাদ থাকে না। আর রসের স্বাদ না থাকলে নলেন গুড়ও ঠিক মতো হয় না।”

সুরেশবাবুর এই পুরো কাজে সহায়তা করেন তাঁর দুই ছেলে—উত্তম ও শুভ। পরিবারের সবাই মিলে শীতের মাসগুলোতে তৈরি করেন বিশুদ্ধ নলেন গুড়। এরপর সরাইহাট, হরিরামপুর হাট, পাতিরাজ হাটসহ এলাকার বিভিন্ন বাজারে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে সেই গুড় বিক্রি করেন।

যদিও লাভ খুব একটা বাড়েনি। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে নলেন গুড়ের দাম তেমন বাড়েনি বলেই ক্ষোভ সুরেশবাবুর। তিনি বলেন, “সবকিছুর দাম বাড়ছে। কিন্তু গুড়ের দাম সেভাবে বাড়ে না। কষ্ট করলে বাজারে ঠিকঠাক দাম পাওয়া যায় না।”

করোনা মহামারীর সময় তাঁর ব্যবসা আরও বিপর্যস্ত হয়েছিল। লকডাউন এবং বাজারে মানুষের কম ভিড়ের কারণে টানা দুই বছর ক্ষতির মুখ দেখতে হয়েছিল তাকে। “লক্ষীর ভাঁড়ে টান পড়ে গিয়েছিল,” বলেন তিনি। তবে বর্তমানে পরিস্থিতি আবার স্বাভাবিক হওয়ায় ব্যবসায় ফের পুরনো গতি ফিরে এসেছে। শীত পড়তেই নলেন গুড়ের চাহিদা বাড়তে শুরু করেছে।

গ্রামের বাসিন্দা বিমান হালদার জানান, সুরেশবাবুর তৈরি নলেন গুড়ের বেশ সুনাম রয়েছে এলাকায়। “ভালো গুড় কিনতে আশপাশের গ্রাম থেকে মানুষ আসে সুরেশবাবুর বাড়িতে। তাঁর গুড়ের একটা আলাদা নাম রয়েছে।”

এদিকে গত কয়েকদিন ধরে উত্তুরে হাওয়া বইতে শুরু করায় পুরো দক্ষিণ দিনাজপুর জেলাজুড়ে ঠান্ডা বেড়েছে। রাতের তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ জবুথবু হয়ে লেপ-কম্বলের আশ্রয় নিচ্ছেন। তীব্র শীতের দাপটে নাকাল জেলার বাসিন্দারা। তবে শীত নিয়ে যত অভিযোগই থাকুক, নলেন গুড়ের স্বাদে তার সবই ম্লান হয়ে যায়—এ যেন বাঙালির অনাদিকালীন রীতি।

নলেন গুড়ের ঘ্রাণ ভেসে আসতেই শীত যেন হয়ে ওঠে আরও মনোরম। ঘরে ঘরে পিঠে তৈরির আয়োজন, বাজারে ভিড়, গাছের রসের ঝরঝর শব্দ—সব মিলিয়ে দক্ষিণ দিনাজপুরের শীত এখন জমজমাট।

নলেন গুড় শুধু খাদ্য নয়, বাঙালির সংস্কৃতিরই এক মিষ্টি অধ্যায়। আর সেই অধ্যায়ের অন্যতম কারিগর সুরেশবাবুর মতো মানুষ, যাঁদের হাতের স্পর্শে তৈরি হয় বাঙালির শীতের সুখস্মৃতি।

 

Thank You for Reading – Political Daily

Thank you for taking the time to read our news at Political Daily.
We appreciate your trust in our platform as your source for reliable and timely Indian news.Your support encourages us to continue delivering accurate, unbiased, and impactful stories that matter to you.

Stay informed. Stay connected.
– Political Daily