রাজদীপ চৌধুরী, পলিটিক্যাল ডেস্ক : ইডির জেরার সম্মুখিন হলেন তার পিসি। মায়া সাহা (পিসি) আবার দলেরই কাউন্সিলর। তিনি বেশ কিছু নথি নিয়ে কলকাতার ইডি দফতরে আসেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তার আয়কাউন্টে চার কোটি টাকা ঢুকেছে। এক জন কাউন্সিলরের কাছে এত টাকা কীভাবে এল তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। এই টাকা কী জীবন কৃষ্ণের মাধ্যমে ঢুকেছে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অবশ্য মায়ার দাবি তার স্বামী ব্যবসায়ী। তিনি দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নন। ওই টাকা তাঁর স্বামীর।
অন্যদিকে জীবনকৃষ্ণ ভদ্রের স্ত্রীর একাউন্টে হদিশ মিলেছে লক্ষাধিক টাকা। কীভাবে এই সন্দেহজনক টাকার লেনদেন হল ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে। এর আগে জীবনকৃষ্ণ ভদ্রের নিজের দুটি মোবাইলের পাসওয়ার্ড দিতে চাইনি বলে অভিযোগ ওঠে । কিন্তু মঙ্গলবার ইডি সূত্রে জানা যায় উদ্ধার হওয়া দুটি মোবাইলের পাসওয়ার্ড ধৃত বিধায়ক চাপে পড়ে বলে দেন ।মুর্শিদাবাদের বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ক জীবন কৃষ্ণ নিয়োগ মামলায় অভিযুক্ত হওয়ায় ব্যাংকের নথি যাচাই করে দেখছেন এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট ( ইডি) । জীবনকৃষ্ণ ও তার স্ত্রী টগরি ব্যাংক একাউন্টে বেশ কয়েকবার ৪৬ লক্ষ্যেরও বেশি টাকা জমা পড়েছে বলে ইডি সুত্রে খবর। ইডি সূত্রে জানা যাচ্ছে এর মধ্যে আর্ধেকের বেশি টাকা জমা পড়েছে জীবনকৃষ্ণ স্থির একাউন্টে । এবং চার মাসের মধ্যে জমা পড়েছে ২৬ লক্ষ টাকা । ২ সেপ্টেম্বর থেকে ১৪ ডিসেম্বর ২০২০ মধ্যে।
জীবনকৃষ্ণ ও তার স্ত্রী টগরি দুজনেই সরকারি কর্মচারী। তাদের বেতন ছাড়া তাদের অন্য কোন আয়ের উৎস নেই। তাহলে কিভাবে একাউন্টে লক্ষ লক্ষ টাকা চার মাসের মধ্যে ঢোকে এই নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয় তদন্তকারীদের মনে । তদন্তকারীদের সন্দেহ হওয়ায় জীবনকৃষ্ণ স্ত্রী কে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। সেই সূত্রে খবর পাওয়া যায় তার স্বামী জীবন কৃষ্ণ এই মোটা অংকের টাকা তার একাউন্টে জমা করে রেখেছেন । এই জিজ্ঞাসাবাদ এর পর খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারী আধিকারিকরা ।
সোমবার আদালতে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ প্রসঙ্গে ছয় সাতজন চাকরিপ্রার্থীদের উদাহরণ তুলে ধরে ইডি । ৪৬ লক্ষ টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের কথাও ইতিমধ্যে আদালত কে জানিয়েছে ইডির আইনজীবী । ইতিমধ্যেই কিছু তথ্য হাতে এসে পড়েছে তদন্তকারীদের। তার মধ্যে উঠে এসেছে জনৈক সঞ্জিত মণ্ডলের নাম। তিনি নাকি ২০১৯ সালে জীবনকৃষ্ণের ব্যাংক একাউন্টে একবার পাঁচ লক্ষ টাকা এবং আরও একবার সাড়ে ছয় ৬ টাকা পাঠিয়েছিলেন । এছাড়াও দীপক দাস ১২ লক্ষ টাকা , নবীন মন্ডল ১ লক্ষ টাকা, রানা মন্ডল ৮ লক্ষ টাকা , অমিত বিশ্বাস ১ লক্ষ টাকা , আরিফ ইকবাল ৯৫ হাজার টাকা এবং প্রণয় চন্দ্র বিশ্বাস তিন দফায় ১২ লক্ষ টাকা জীবনকে পাঠিয়েছিলেন বলে ইডি সূত্রের দাবি।
এর মধ্যে ২০২২ সালে দীপক দাসকে ৫ লক্ষ টাকা বিধায়ক ফেরত দিয়েছিলেন বলে দাবি তদন্তকারীদের। কিন্তু এই চারজন কারা কি তাদের পরিচয় এখনও পর্যন্ত জানা যায়নি, বলে সূত্র মারফত খবর । অভিযুক্ত বিধায়ক নিজের নামে এবং আরও কয়েকজনের নামে জমি এবং বাড়ি কিনেছিলেন বলে কেন্দ্রীয় সংস্থার তদন্তে এও উঠে এসেছে । সূত্রের দাবি জনৈক মায়া রানি, নিতাই সাহা, রাজেশ ঘোষ এবং গৌর সাহার এই চারজনের নামে জমিগুলো কেনা হয়েছিল । ঘটনাচক্র বিধায়কের পিসির নাম মায়া সাহা । তবে মায়া রানী এবং মায়া সাহা একই মহিলা কিনা স্পষ্ট নয়। জীবন এবং তার পরিচিতদের নামে কেনা হয়েছিল এই সম্পত্তিগুলি তারমধ্যে বেশি জমির নগদেই কেনা হয়েছিল বলে সূত্র মারফত খবর ।
এই বিষয় নিয়েও জীবনকৃষ্ণকে বারংবার জেরা করেছে তদন্তকারী দল। সেখানে তিনি জানান, কিছু সম্পত্তি তিনি নিজের ব্যক্তিগত সঞ্চয় থেকে কিনেছিলেন। এছাড়াও কিছু সম্পত্তি তার বাবা বিশ্বনাথ সাহা উপহার দিয়েছিলেন । যদিও জিজ্ঞাসা বাদে সময় বিশ্বনাথ এর কথা অস্বীকার করেছেন ইডি ।গ্রেফতারের পর সোমবার জীবনকৃষ্ণকে মুর্শিদাবাদ থেকে কলকাতায় নিয়ে আসা হয় । কলকাতার নগর দায়রা আদালতে পেশ করে ৬ দিনের জন্য তাকে নিজেদের হেফাজতে নেন তদন্তকারীরা । মঙ্গলবার ইডির তরফ থেকে বিধায়ক জীবন কৃষ্ণের গ্রেফতারির কথা বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের দপ্তরের সরকারি ভাবে জানানো হয়। অন্যদিকে দ্রুত বিধায়কের দুটি মোবাইলে কি তথ্য আছে তা সংগ্রহ করতে চাইছেন তদন্তকারী অফিসাররা । সোমবার বিধায়কের বাড়িতে ইডির হানার সময় ফের এক নাটকীয় পরিস্থিতি তৈরি হয়, যেমন হয়েছিল দু’বছর আগে সিবিআইয়ের হানার সময়। অভিযোগ, ইডি হানা দিতেই বাড়ির পিছন দরজা দিয়ে বেরিয়ে পাঁচিল টপকে পালানোর চেষ্টা করেন তিনি। দৌড়নোর পরে তাঁকে ধরে ফেলেন তদন্তকারী অফিসাররা।















