এষণা কুন্ডু,পলিটিক্যাল ডেস্ক : তৃনমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের মঞ্চে দাঁড়িয়ে ফের রাজ্য রাজনীতির সুর চড়ালেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বিরোধীদের কটাক্ষ থেকে শুরু করে আইনি লড়াইয়ের সমালোচনা— কার্যত আক্রমণের ঝড় উঠল তৃণমূল শিবিরের বক্তব্যে। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের মঞ্চে উপস্থিত দোলা সেন, ফিরহাদ হাকিম, বৈশ্বনর চট্টোপাধ্যায়, সুজিত বসু, সব্যসাচী দত্ত, মালা রায়, জয়া দত্ত এবং মলয় ঘটক । যার ফলে প্রশ্ন উঠেছে – যারা মঞ্চে ছিলেন তারা কি ছাত্রছাত্রী? বিরোধীদের অভিযোগ, তৃনমূল আসলে ছাত্র-যুবদের নাম করে রাজনীতির প্রহসন করছে।
অভিষেক বন্দোপাধ্যায় সরাসরি দাবি করলেন “২০২৬ নির্বাচনে বিজেপি ৫০ আসন ও পাবেনা”। তাঁর অভিযোগ – বাংলার ১০ কোটি মানুষকে অপমান করেছে বিজেপি।অন্যদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন রাজ্যের উন্নয়নকে বাধা দিতে চায় যারা তারাই আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছে। তাঁর কটাক্ষ, “যারা মামলা করে তারা দুই নম্বরী। কোনও বিষয় পছন্দ না হলেই আদালতে ছুটছে।” পাশাপাশি তিনি জানান, তিনি বই লিখবেন— “কে কেমন ছিল?”— সেই বইতে ফুটে উঠবে রাজনীতির অন্তরালের অজানা কাহিনি। এছাড়াও ধর্মীয় নানা বিষয় নিয়ে কটাক্ষ করে প্রশ্ন তোলেন মূখ্যমন্ত্রী।
উন্নয়নের ফিরিস্তি
তৃণমূল নেতৃত্ব দাবি করেছে, গত এক দশকে রাজ্যের আয় পাঁচ গুণ বেড়েছে। দরিদ্র দূরীকরণেও উল্লেখযোগ্য সাফল্য এসেছে। মমতা বলেন, “এক কোটি ৭২ লক্ষ মানুষ দারিদ্র্যসীমা থেকে বেরিয়ে এসেছেন।” তবে এখানেই প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। তাঁদের বক্তব্য, যদি সত্যিই আয় বাড়ে এবং দরিদ্রতা কমে থাকে, তাহলে এখনও এত মানুষ কেন কাজের সন্ধানে ভিনরাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে যাচ্ছেন?
বিরোধীদের কটাক্ষ
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিনের সভায় বিরোধীদের সরাসরি আক্রমণ করেন। তিনি বলেন, “যারা একের পর এক কেস করে তারা আসলে দুই নম্বরী। রাজনৈতিক বা সামাজিক কোনও বিষয়ে আপত্তি থাকলেই আদালতের দ্বারস্থ হওয়া সমাধান নয়। রাজনীতি মানে মানুষের মধ্যে গিয়ে লড়াই করা, আদালতে দৌড়নো নয়।” একইসঙ্গে তিনি ঘোষণা করেন, ভবিষ্যতে তিনি একটি বই লিখবেন— “কে কেমন ছিল? আমার দেখা নেতারা”। তাঁর অভিজ্ঞতা এবং রাজনৈতিক যাত্রার আলোকে বিভিন্ন নেতার চরিত্র এবং কর্মকাণ্ড সেই বইতে তুলে ধরা হবে বলেই জানান তিনি।
সভামঞ্চে তিনি দাবি করেন, “নেতাজি নীতি আয়োগ তৈরি করেছিলেন।”মমতার বক্তব্যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।এই বক্তব্যের পড়েই রাজনৈতিক মহলের প্রশ্ন ওঠে, কোন নেতাজির কথা উল্লেখ করেছেন তিনি? কারণ ইতিহাস অনুযায়ী নীতি আয়োগ গড়ে তোলা হয়েছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আমলে, স্বাধীনতা সংগ্রামী নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর সঙ্গে এর কোনও যোগ নেই। তাহলে কি তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে নেতাজি বলতে চাইলেন? এই প্রসঙ্গে বিজেপি নেতা কাসেম আলী বলেন -” কোনো একদিন আপনারা শুনতে পারবেন ব্রিটিশ আমলে তৈরি হাওড়া ব্রিজও মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি এর আমলেই তৈরি হয়েছে”।
ধর্মীয় প্রসঙ্গ
ধর্মীয় প্রসঙ্গও এড়িয়ে যাননি মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “জগন্নাথ ধামকে দুর্গা অঙ্গন করে দেওয়া হবে।” তাঁর এই প্রতিশ্রুতি প্রশংসা কুড়োলেও বিরোধীদের তরফে পাল্টা প্রশ্ন উঠেছে। তাঁদের বক্তব্য, রাজ্যের জনসংখ্যার প্রায় ৩০ শতাংশ মুসলিম সম্প্রদায়ভুক্ত হলেও, তাঁদের জন্য বিশেষ প্রকল্প বা মসজিদ নির্মাণের ক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকা তুলনামূলকভাবে অনেক কম। সমালোচকদের দাবি, মুখ্যমন্ত্রী রোজার ইফতারি অনুষ্ঠানে গেলেও, দেওয়ার বেলায় পিছিয়ে যান।সব মিলিয়ে, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠান শুধু একটি সাংগঠনিক জমায়েত হয়েই থাকেনি, বরং রাজনৈতিক আক্রমণ-প্রতিআক্রমণের নতুন ক্ষেত্রও তৈরি করেছে। অভিষেকের ভাষণে বিজেপির বিরুদ্ধে স্পষ্ট কৌশল যেমন ধরা পড়েছে, তেমনি মমতার বক্তব্যে উঠে এসেছে প্রশাসনিক সাফল্যের দাবি এবং সমালোচনার জবাব। তবে তাঁর একাধিক মন্তব্য নিয়েই তৈরি হয়েছে নতুন বিতর্ক। ফলে এদিনের সভা নিছক আনুষ্ঠানিকতা না হয়ে রাজ্যের আসন্ন রাজনৈতিক লড়াইয়ের ইঙ্গিত দিয়েই শেষ হয়েছে।













